আরিফ আজাদের বই অনলাইন এবং অফলাইন দুই জায়গাতেই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রকমারি.কম এ বেস্ট সেলার হিসাবে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন। শুধু তাই নয় অমর একুশে বইমেলায়ও তার প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ সিরিজের দুইটা বই নাম্বার ওয়ান সেলার হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে।
বই মেলায় স্টলের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বই কিনে সবাই। উনার লেখাগুলো কোন মিডিয়া বা পোর্টাল প্রচার করে না। পত্রিকাতেও উনাকে নিয়ে কোন ফিচার লেখা হয় না, বিজ্ঞাপন হয় না, টেলিভিশনে লাইভ হয় না। আর তিনিও ফেসবুকে তেমন লাইভে আসেনি। অধিকাংশ পাঠক উনাকে এখন পর্যন্ত দেখেও নাই, কিন্তু তারপরও উনার বইগুলোর বেশি বিক্রি হবার মুল রহস্য কি?
মূলত উনাকে নিয়ে কিছু বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই তবুও উনার সম্পর্কে কিছু বলার ব্যর্থ প্রয়াস। কারণ, উনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা। মূলত উনার লেখার মাধ্যমেই উনার জানার আগ্রহ আরও বেশি করে তুলে। তাকে নিয়ে খুব অল্প পরিমাণে জানার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। আপনাদের সাথে সেটুকুই শেয়ার করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
আরিফ আজাদের জন্ম
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯৯০ সালের ৭ ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।
আরিফ আজাদের শিক্ষা
চট্টগ্রাম জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ। তারপর ভর্তি হন একটা সরকারি কলেজে। সেখান থেকে ভালো রেজাল্ট করে উত্তীর্ণ হবার পর, ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যক্তিগত কারণে তেমন কিছুই প্রকাশ করেননি তিনি। এমনকি নিজের কোন ছবিও প্রকাশ করেননি, তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আরিফ আজাদের বৈবাহিক অবস্থা
পরিবারের দেখা শোনার মাধ্যমে আরিফ আজাদের বিয়ে হয়েছিলো। মজার বিষয় হচ্ছে, তার স্ত্রীও জানতেন না, তিনি যে এতো বড় মাপের লেখক। তিনি প্রচণ্ড অন্তর্মুখী স্বভাবের এবং প্রচার-বিমুখ ধরনের মানুষ।
আরিফ আজাদ সম্পর্কে কিছু উক্তি
একসময় ছেলেরা হিমু হতে চাইতো এখন ছেলেরা সাজিদ হতে চায়। আরিফ আজাদ তরুণ প্রজন্মকে হিমু থেকে সাজিদে রূপান্তরিত করতে পেরেছে। এটাই একজন লেখকের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি
কথাগুলো বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক এবং লেখক আসিফ নজরুল। আর যেই মানুষটিকে নিয়ে কথাগুলো বলেছেন, তিনি হচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক আরিফ আজাদ।
একটা মানুষ এতো অল্প সময়েই এতো জনপ্রিয় হবার মূল অস্ত্রই তার লেখনী-শক্তি। মননশীল চিন্তাভাবনা এবং যুক্তি দিয়ে ইসলামকে সবার সামনে এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে তিনি লক্ষ লক্ষ তরুণের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
আরিফ আজাদকে নিয়ে অসাধারণ একটি উক্তি করেন, জনপ্রিয় ইসলামিক সাহিত্যিক ডা. শামসুল আরেফীন। তিনি বলেন,
আরিফ আজাদ একজন জীবন্ত আলোকবর্তিকা।
দা গার্ডিয়ান প্রকাশনী আরিফ আজাদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন,
তিনি বিশ্বাস নিয়ে লিখেন, অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে। প্রচার বিমুখ এই মানুষটা তার মননশীল চিন্তা ভাবনা এবং যুক্তি দিয়ে সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। আরিফ আজাদকে এই কথাগুলো আমার ব্যক্তিগত না, আমার বিশ্বাস এই কথাগুলো এদেশের হাজারো তরুণের মনের কথা।
আরিফ আজাদের বই
মূলত লেখালেখির জগতে তিনি আসেন ২০১৭ সালে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদের মাধ্যমে। নিজের লেখা বইয়ের পাশাপাশি তিনি সম্পাদনাও করে থাকেন। এ বছর তার প্রকাশ পেয়েছে বই “বেলা ফুরাবার আগে” যা পাঠকের মাঝে ব্যাপক সাড়া প্রদান করেছে। তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে
- প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১
- প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২
- মা, মা, মা এবং বাবা
- বেলা ফুরাবার আগে
- আরজ আলী সমীপে
- প্রত্যাবর্তন
এই কয়েকটি বইয়ের মাধ্যমে বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যুক্তি, মনন আর ইসলামের আকীদা এইগুলো তার লেখাকে দিয়েছে অন্যমাত্রা।
জনপ্রিয় ৫টি আরিফ আজাদের বই
১. প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১ এবং ২
অবিশ্বাসীদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে লেখা এই বইটি, তরুণ থেকে বয়স্ক প্রায় সবার কাছেই সমাদৃত হয়েছে। সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যারা নিজেদের মুক্ত-চিন্তাশীল দাবি করে ইসলামকে হেয় বা ছোট করতে চায়, তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেই এই বইটি লিখা।
গ্যরান্টি দিচ্ছি বইটি একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে উঠতে মন চাইবে না আপনার। নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের নাস্তানাবুদ করে দিয়েছে এই বইটি। একজন মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও শয়তানের প্ররোচনায় মাঝে মধ্যে উদ্ভট প্রশ্নের উদয় হয়তো মনে। আলহামদুলিল্লাহ এই বইটা পড়ার মাধ্যমে আপনার সকল প্রশ্নের সঠিক এবং সুনিপুণ জবাব পেয়ে যাবেন।
আজকাল তো দেখা যায় মুক্ত চিন্তার অধিকারীরা ৪/৫ টা বই পড়ে নিজেদের খুব জ্ঞানী প্রমাণ করতে চায়। আর তাদের সেই মূর্খতাকে আরিফ আজাদ ভাই তার সুনিপুণ লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করতে পেরেছেন।
২. বেলা ফুরাবার আগে
বইটিতে মূলত আমাদের বর্তমান সমাজের চিত্রকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যুবক যুবতীরা প্রেম, জাস্ট ফ্রেন্ড নামক হারাম রিলেশনশিপে মধ্যে থেকে নিজেদের ঈমান কিভাবে নষ্ট করছে, তা দেখানো হয়েছে। এছাড়াও, ভারচুয়াল জগতে আমরা প্রতিনিয়ত কিভাবে শয়তানের ধোঁকায় পড়ছি, তা নিয়েও বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার উপায়ও উল্লেখ করেছেন এখানে। এছাড়াও নবী করিম (সা:) এর কিছু হাদিসও উল্লেখ করা হয়েছে। মোটকথা, এই বইটিতে যুগের সাথে মানানসই সব সমস্যা এবং সেগুলোর সমাধান দিতে চেষ্টা করছেন, আমাদের প্রিয় আরিফ আজাদ ভাই।
৩. প্রত্যাবর্তন
অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া তরুণ সমাজের আলোতে ফিরে আসার গল্প নিয়ে এই বইটি লেখা। শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়া নামধারী মুসলিম, যার জীবনে সিগারেট, নেশা, পর্ণোগ্রাফি, বিবাহ বহির্ভূত হারাম রিলেশনশিপ এককথায় পাপে জর্জরিত যুবকের আলোর পথে ফিরার গল্পকে নিয়েই এই বইটা লেখা।
বইটি পড়লে আপনি বাস্তবতার সাথে অনেক মিল খুঁজে পাবেন। নিজেকে একবার হইলেও বিবেকের আদালতে দাড় করাবেন। অনুসুচনায় নিজের চুলগুলো নিজেরই টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছে করবে। তাই একবার হলেও এই বইটা পড়ার অনুরোধ রইলো সবাইকে।
সময়ের এই ক্রান্তি লগ্নে আরিফ আজাদ যেন তরুণদের জন্য আলোর বৈঠা হাতে। বর্তমান সময়ে চারিদিকে পাপাচারে ঠিকানা হারিয়ে ফেলা যুবকদের জন্য আরিফ আজাদ যেনও এক স্বস্তির নাম, আশার আলো।
সাদা পাতায় কালির ছোঁয়ায় আরিফ আজাদের লিখা ইসলামিক সাহিত্য পড়ে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে যুব সমাজ। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করি যে, আরিফ আজাদকে কবুল করে নিয়ে আরও কয়েকশ আরিফ আজাদকে যেন তৈরি করে দিন। আমিন
৪. মা, মা, মা এবং বাবা
বইটি পড়েছে অথচ চোখে পানি আসে নি এমন খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বইটি পড়লে মা বাবার প্রতি সম্মান, ভালবাসা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটি পিতা-মাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক।
নেই কোথাও খাদ সেই সম্পর্কে, নেই স্বার্থ। জন্ম, বেড়ে উঠা, শৈশব, কিশোর থেকে যুবক হয়ে উঠা সব কিছুতেই তারা মূল চরিত্রে থাকেন। অথচ দুনিয়ায় মোহে পড়ে আমরাই এই পিতা-মাতাকে দূরে ঠেলে দেই, এরকমই একঝুড়ি গল্পের সমাহার নিয়ে রচিত হয়েছে মা, মা, মা এবং বাবা বইটি৷ বাবা মাকে নিয়ে এমন কিছু গল্প লেখা যেগুলো পড়লে আপনার মনে দাগ কেটে যাবে এবং অজান্তেই চোখের এক কোণে পানি চলে আসবে।
৫. আরজ আলী সমীপে
সাম্প্রতিককালে অন্যতম আলোচিত বই এইটি। কোরআনের আলোকে বিজ্ঞানের বিবর্তনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে আল্লাহ আছেন তার উপযুক্ত প্রমাণ দিয়েছেন। যারা আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তাদের জন্য এই বইটি আশা করি প্রশ্নের সমাধান দিবে। যারা মুসলিম অথচ ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান কম তাদের জন্য বইটি অনেক উপকারে আসবে।
কেননা নাস্তিকদের ভুল যুক্তিগুলো মুসলমানদের যেন বিভ্রান্ত করতে না পারে সেজন্য এই বইটি লেখা। সাম্প্রতিককালে দেখা গিয়েছে, মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে ইসলাম বিরোধীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। বিজ্ঞান চর্চার নামে ইসলামের নামে আজেবাজে কথা রটানো।
ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলাকে মুক্তমনের পরিচয় আর ইসলামের পক্ষে কথা বলাকে মৌলবাদের শামিল হবে এরকমই মনে করেন তারা। মোটকথা তাদের সব চুলকানি এই ইসলামকে নিয়েই। ঠিক তখনই তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরলেন আরিফ আজাদ। তাদের শুধু মিথ্যাচারের বিরুদ্ধেই কথা বলেন নি, বলেছেন ইসলামের মর্যাদা নিয়ে, তুলে ধরেছিলেন ইসলামের অবস্থাকে।