Tuesday, October 15, 2024
HomePhilosophyতসলিমা নাসরিনের নাসরিনের স্বর্গের দর্শন!

তসলিমা নাসরিনের নাসরিনের স্বর্গের দর্শন!

গত কয়েকদিনে ফেসবুক আমাকে তিন বার হত্যা করলো। আজ অন্তত আট ঘণ্টা মৃত পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম, স্বর্গে ট্বর্গে যাবো না, জলে ভেসে থাকবো কচুরিপানার মতো। কিন্তু উনি খবর পাঠালেন। যেতেই নাকি হবে।

দেখা হতেই আমি সোজা বললাম, কী ব্যাপার, ফেসবুককে দিয়ে কি আপনিই আমাকে বারবার মারছেন?

উনি হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, এটা রহস্যই থাক।

উনি আমাকে হঠাৎ বিকিনি দিলেন পরতে।

বিকিনি দিয়ে কী হবে? জিজ্ঞেস করলাম।

উনি বললেন, কী আবার? বেদানার রসের সাগরে সাঁতার কাটবে।

–না না এত ঠাণ্ডায় সাঁতার কাটা যাবে না। জমে পাথর হয়ে যাবো।

–এই তো সুইচ টিপে পানি গরম করে দিচ্ছি। আর কাউকে বিশ্বাস না করলেও আমাকে তো করতে পারো।

অনেকক্ষণ সাঁতরে এলাম। উনি তোয়ালে হাতে নিয়ে বসে ছিলেন পাড়ে।

বললাম, –আপনাকে ভালো না বেসে পারা যাচ্ছে না। বেদানার রসের সাগর চাইলাম, আর আপনি বানিয়ে দিলেন।

–তুমি যা চাও, আমি তা-ই দিতে রাজি।

–ঠিক তো?

–ঠিক।

 

আমি ভেজা বিকিনি ছেড়ে জিন্স পরে নিলাম। এইবার আরাম কেদারায় আরাম করে বসে বললাম, –সাপ বিচ্ছু আমি খুব ভয় পাই, দোযখের লোকদের পুঁজ খাওয়ানোটা ডিজগাস্টিং, আর মাথার ওপর অমন বেশি পাওয়ারের সূর্য নামিয়ে আনাটাও শাস্তি হিসেবে খুব প্রিমিটিভ। জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার কথা ওদের, কিন্তু আপনি ছাই করছেন না। এভাবে শাস্তি দেওয়ার আইডিয়াটা কি আপনার মাথা থেকে এসেছে নাকি অন্য কারও? আপনি তো বেশ অমায়িক, আন্তরিক। হৃদয় বলে কিছু তো আছে আপনার। দেখুন, আমার তো হাজারো শত্রু, দিন রাত আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে বলছে, অশ্লীলতা করছে, আমাকে ছিঁড়ে খেতে চাইছে। আমি তো কারও জন্য আপনার শাস্তির মতো শাস্তির কথা কল্পনাও করতে পারি না। আমি এত ছোট, এত তুচ্ছ, আমিই তো সবাইকে ক্ষমা করে দিই।

–তুমি তাহলে কী করতে বলো আমাকে?

–সবাইকে ক্ষমা করে দিন। ওরা তো আপনারই সৃষ্টি। আমি কোনও কবিতা সৃষ্টি করলাম, সেই কবিতাকে কি কুচি কুচি করে কাটতে পারবো? পারবো না, কবিতার জন্য একটা মায়া থাকবে আমার।

–তুমি কি মনে করো আমার মায়া নেই?

–আছে। নিশ্চয়ই আছে। আমার জন্য আপনার প্রচুর মায়া। কিন্তু ওই যে দোযখে বসে কাঁদছে বেচারাগুলো, ওদের মায়া করুন। ওদের বের করে এনে দোযখগুলো একে একে বন্ধ করে দিন। সাপ বিচ্ছুগুলোকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিন। দোযখী সাপ বিচ্ছু নিয়ে এন্থ্রপলজিস্টরা একটু গবেষণা করার সুযোগ পাক।

–তাহলে কী দাঁড়ালো?

–আপনাকে মহান হতে হবে। মহান হলে কেউ প্রতিশোধ নেয় না, শারীরিক শাস্তি দেয় না। যারা ভুল করে, অন্যায় করে, তাদের জন্য একটি সংশোধনাগার খুলুন। তাহলেই তো সমস্যা দূর হয়।

–তুমি তো ভালো বুদ্ধি দিচ্ছ।

–আমি তো ভালোই বুদ্ধি দিই। দোযখ বানাবার বুদ্ধি আপনাকে কে দিয়েছিল শুনি?

–আর বোলো না। কী যে ওলোট পালোট হয়ে গেছে সব। আচ্ছা, আমাকে কি পৃথিবীর লোকেরা মহান ভাবে না?

–যাদের মাথায় ঘিলু আছে, তারা প্রশ্ন করে। মহান হলে এমন নির্মম শাস্তি তো কেউ দেয় না। আর যারা বেহেস্তের লোভে আর দোযখের ভয়ে চোখ বুজে আপনাকে মহান বলে, তাদের মহান বলাটা জাস্ট ফেক। তারা মীন করে না। আপনি আজ ঘোষণা দিন, যে, পরকাল বলে কিছু নেই, দোযখ বেহেস্ত বলে কিছু নেই। দেখুন কী হয়, অমনি আপনাকে গালি দেবে, যত কবিরা গুনাহ আছে, সব করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। আগে যে পাপ করতো না তা নয়, করে কাবা ঘুরে আসতো। পাপ মাফ হয়ে যেত। পরকাল নেই জানলে হজে যাবে না, নামাজ পড়বে না, রোজা রাখবে না। আপনার নামও নেবে না। আপনি সৃষ্টিকর্তা জানার পরও না।

–এত খারাপ মানুষ সৃষ্টি করেছিলাম?

–করেছিলেন, এ নিয়ে আফসোস করে এখন লাভ নেই। মাথায় ঘিলু দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কেউ ঘিলুর অপব্যবহার করছে। কেউ করেনি।

 

উনি খুব বিষণ্ণ বসে রইলেন। এবার বললাম, — আপনি দো জাহানের মালিক। এভাবে বিষণ্ণ বসে থাকা আপনাকে মানায় না। এখানে আপনি খুব বোর ফিল করছেন, মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে তো পৃথিবীটা ঘুরতে পারেন। কিছু লোক তো মনে করে আপনি সর্বত্র আছেন।

–আমি তো সেরকমই একটা আভাস দিয়েছিলাম।

–দিয়েছিলেন তাহলে যান না কেন পৃথিবীতে। সর্বত্র বিরাজ করতে?

–ভয় হয়। মানুষগুলো আজকাল বেশ হিংস্র হয়ে উঠছে।

–সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি বলে দিন, সবাই যেন জাত পাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ভালোবাসে। দরিদ্রকে সাহায্য করতে বলেছেন ভালো কথা, তবে জরুরি কথাটি বলে দিন। দারিদ্র্য দূর করতে বলুন। মেয়েদের মারতে পারার অধিকার স্বামীদের দিয়েছেন, সেই অধিকার তুলে নিন। সমানাধিকারের কথা বলুন, সমতার কথা বলুন।

–নিশ্চয়ই বলবো। আচ্ছা বলো তো, যখন পৃথিবীর সর্বত্র বিরাজ করতে যাব, তখন তোমার সঙ্গে দেখা হবে তো?

–আপনি চাইলে নিশ্চয়ই হবে।

–আমি কিন্তু একটু বেশি রাতের দিকে আসবো তোমার কাছে। দরজায় নক করবো।

–নিশ্চয়ই।

 

উনি আমাকে বিদেয় দিলেন। চোখ ছলছল।

তসলিমার  ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

তসলিমা নাসরিনের নাসরিনের স্বর্গের দর্শন!



Hero

Welcome to the future of building with WordPress. The elegant description could be the support for your call to action or just an attention-catching anchor. Whatever your plan is, our theme makes it simple to combine, rearrange and customize elements as you desire.

Translate »