আজ দুপুরেও ফেসবুক আমাকে মেরে ফেলেছিল। ন’ ঘন্টা মৃত অবস্থায় ছিলাম। উনি সেই ডানাওয়ালা ঘোড়া পাঠিয়ে আবারও তাঁর কাছে নিয়ে গেলেন। বেহেস্তের বাগানে মৃদুমন্দ হাওয়ায় বসে দুজন মদিরা পান করছি। ফেসবুক, জিহাদি, সাইবার ক্রাইম ইত্যাদি বিষয়ে কিছুক্ষণ কথা বলার পর বললাম, ‘দিনে পঞ্চাশ বার নামাজকে তো দরকষাকষি করে একজন পাঁচ বার করিয়ে নিয়েছিল। এবার আমার অনুরোধে কিছু করুন। নামাজ এক বেলা করে দিন। চাকরি ব্যবসা সংসার সন্তান সামলে পাঁচ বেলা ওঠবস করাটা টু মাচ।’
–তুমি তো নামাজ পড়ো না, তোমার এত ভাবনা কেন?
–আমি আর নিজের জন্য কবে ভাবলাম! অন্যের জন্যই তো ভেবে মরি।
–ঠিক আছে, তুমি যখন বলছো, আমি নামাজ এক বেলা করে দিলাম।
–আর হিজাব বোরখার ব্যাপারটা বলুন তো, কেন এসবের অর্ডার দিয়েছেন? গরমে মেয়েরা বোরখার ভেতর সেদ্ধ হতে থাকে। হিজাবটাও চুলের স্বাস্থ্য নষ্ট করছে। এমনিতে মেয়েদের মাথা গরম, এসব পরে আরও গরম হচ্ছে মাথা।
–আমি তো পরতে বলিনি এসব। বুঝেছি, ওই ছেলেটাই রটিয়েছে।
–অত শত বুঝি না, আপনি এখন ঘোষণা করে দিন মেয়েরা যেন যে যার পছন্দের পোশাক পরে।
–ওদের বলে দিও, হিজাব আর বোরখা পরে কোনও লাভ নেই। স্ক্যানার বসিয়েছি বেহেস্তের দরজায়। কে কার মাথা কী দিয়ে ঢেকেছে স্ক্যানার তা দেখবে না, দেখবে কার মাথার ভেতরে কী আছে। ভালো চিন্তা থাকলে সবুজ বাতি, খারাপ চিন্তা থাকলে লাল।
–ভালো ব্যবস্থা। কিন্তু এই খবর রাষ্ট্র করার জন্য আমার হাতে কিছু নেই। এক ফেসবুক আছে, ওতেই জানিয়ে দেব।
–তোমার নিজের জন্য কিছু চাইবে না? ধন দৌলত, পরীক্ষায় পাশ, চাকরি বাকরি, সাফল্য, সুখ?
–একেবারেই না। আপনার কাছে চাইতে হলে আপনার ভক্তগুলোর জন্য চাইবো, আর আমি তো আপনার সঙ্গে বসে একটু সুখ দুঃখের কথা বলতে পারলেই খুশি।
–এইজন্যই তোমাকে আমার এত ভালো লাগে। এত যে ভক্ত দেখি, তোমার মতো কাউকে দেখি না। আচ্ছা, তুমি তো দেখতে চেয়েছিলে তোমার দেশের মোল্লা মওলানা ওয়াজি হুজুরেরা মৃত্যুর পর এখন কোথায় আছে, কী করছে। চল দেখবে চল।
উনি আমাকে দোযখের দিকে নিয়ে গেলেন। দেখলাম দোযখে ওরা পুড়ছে, আর আমাকে দেখেই চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে বাঁচাও বাঁচাও।
দেখে আহা আহা করে উঠলাম, বললাম, বেচারারা অনেক পুড়েছে, এখন আগুনের আঁচটা কমিয়ে দিন।
উনি আঁচটা কমিয়ে দিলেন। এবার আবার অনুরোধ, ওদের একটু বাইরে আসতে দিন। বাগানে কিছুক্ষণ মুক্ত হাওয়ায় হাঁটুক, খাবার টাবার কিছু খাক। উনি আমার অনুরোধ রাখলেন না। বললেন, ওরা বদ, প্রতারক, অন্যকে ঠকায়, তুমি যে ওদের জন্য মায়া করছো, উপকার করতে চাইছো, ওরা বেরিয়ে এসে সুযোগ পেলেই তোমার গলা টিপে ধরবে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে এলাম। তিনিও পাশে পাশে।
এবার আমার জিজ্ঞাসা, শুনেছি অমুসলিমদের নাকি দোযখে পাঠাবেন?
–ডাহা মিথ্যে। এমন কথা তো কস্মিনকালেও বলিনি। বুঝেছি, ছেলেটা রটিয়েছে।
–শূকরের মাংস খেতে কি নিষেধ করেছেন? মদ্য পান কি নিষিদ্ধ?
–পাগল হয়েছো? আমার গ্লাসে কী, দেখতে পাচ্ছো না? আমি নিজেই তো পান করি। আজ লাঞ্চে পর্ক ছিল। বুঝেছি, ওই ছেলেটাই।
–রোজা ফোজার ব্যাপারটা আমার কাছে খুব হাস্যকর ঠেকে। আপনি কি সত্যিই এমন কিছু বলেছিলেন, নাকি ওই ছেলেটাই?
— ওই ছেলেটাই।
এরপর অনেকটা হাঁটতে হাঁটতে বেহেস্তের বাগানে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করি–এখানে করোনার কী অবস্থা? সবার টিকা হয়েছে?
–বেহেস্তে যারা আছে, সবার হয়ে গেছে, দোযখবাসিরা নিতে চাইছে না, বলছে টিকা নিলেই কী, না নিলেই কী।
–তাও কথা।
উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, পৃথিবীতে এত ঝামেলা, আমার আর ভালো লাগে না। কেন যে মানুষ নামক জীবকে বানিয়েছিলাম! তোমার সঙ্গে কথা বলেই আমি একটু শান্তি পাই।
–পৃথিবীর কথা আর কী বলবো! এই একটু ভালো তো এই খারাপ। কেউ ভুগছে, কেউ আরাম করছে। আপনার যারা ভক্ত, তাদের মধ্যে তো আজকাল মাদক ব্যবসায়ী বেরোচ্ছে, ধর্ষক বেরোচ্ছে।
–সে খবর জানি। ওদের জন্য জাহান্নাম রেখেছি।
–দোযখের দরজাতেও কি স্ক্যানার বসিয়েছেন?
–তা আর বলতে!
এবারও বিদেয় নেওয়ার সময় আলিঙ্গন আর চুম্বন পেলাম।