Tuesday, October 15, 2024
HomeInternationalনিজের বইয়ের ফেরিওয়ালা দৃষ্টিহীন ‘কবি’

নিজের বইয়ের ফেরিওয়ালা দৃষ্টিহীন ‘কবি’

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় কয়েকটি বই হাতে ঘুরছিলেন বয়স্ক এক নারী, চোখে কালো চশমা; কৌতূহলবশত কাছে যেতেই জানালেন, নিজের লেখা বইগুলোই ফেরি করে বিক্রি করছেন তিনি।

কোহিনূর আক্তার জুঁই একজন কবি। সাত বছর বয়সে দৃষ্টি হারালেও জীবন সংগ্রামে থেমে যাননি। পড়ালেখা শেষ করেছেন, প্রকাশ করেছেন নিজের লেখা কবিতার সাতটি বই।

শুক্রবার সেগুলোই বইমেলায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছিলেন। আর বই বিক্রি করে পাওয়া অর্থ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত একটি হাসপাতালে খরচ করছেন বলে জানালেন।

 

তিনি বলেন, “শ্রুতি লেখক দিয়ে ২০০৫ সালে ‘উপহার’ নামে একটি বই প্রকাশ করি। যাকে সামনে পাই তাকে দিয়ে লেখানোর চেষ্টা করতাম তখন। আমি বলি, সে লেখে। তারপর নিজের উদ্যোগেই বই প্রকাশের ব্যবস্থা করি।”

‘উপহার’ বইয়ের একটি কবিতায় জুঁই লিখেছেন- “আজি এ শুভদিনে কি দিবো তোমায় উপহার/তোমাকে দেবার মতো নেই তো কিছুই আমার। তুমি থাকো শ্বেতপাথরে গড়া অট্টালিকা পর/ আমার বসতি পুঞ্জবীথিকা ছায় ক্ষুদ্র মাটির ঘরে।”

 

জুঁই বলেন, “সাত বছর পর্যন্ত চোখে দেখেছি। এরপর থেকে দৃষ্টিহীন হলেও আমার অর্ন্তদৃষ্টি মরে যায়নি। প্রকৃতির নানা বিষয় আমাকে ভাবায়, লিখতে অনুপ্রেরণা দেয়।”

জুঁইয়ের অন্য বইগুলো হলো- ‘সুখ’, ‘বাংলাদেশের মহান স্থপতি-শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘প্রজাপতির খেলা’, ‘কন্যা সন্তানের জন্য পিতার আয়ু দান’, ‘আমার মায়ের অপ্রত্যাশিত কান্না’ এবং ‘অমর অক্টোর-না বলা কথা’

কোহিনুর আক্তার জুঁইয়ের জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুর জেলার শিবচরে। সাত বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর ১৯৭৪ সালে চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসেন। দৃষ্টি শক্তি ফিরে না পেলেও থেকে যান ঢাকাতেই।

জুঁই জানান, পড়ালেখায় তার ঝোঁক ছিল প্রবল। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ১৯৭৭ সাল থেকে ঢাকার মিরপুরের ব্যাপ্টিস্ট সংঘ অন্ধ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। ১৯৮৬ সালে মিরপুরের গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮৮ সালে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ হয়।

পুলিশ ভেরিফিকেশন কী ও কেন করা হয়?

১৯৯৪ সালে সরকারি বাঙালা কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র থেকে বিএসএট করেন। ১৯৯৮ সালে মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে শেষ হয় এমএ।

কোহিনূর আক্তার জুঁই

২০১৬ সালে জয়িতা অন্বেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার মধ্যে সামাজিক ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার পান জুঁই।

তিনি জানান, বিয়ের পর স্বামী বিদেশ গিয়ে আর যোগাযোগ করেননি। তখন ঠাঁই হয় ভাইয়ের সংসারে। দুই ভাই ও দুই বোন রয়েছে তার।

নিঃসন্তান জুঁই ১৯৯২ সালে সাভারের হেমায়েতপুর যাদুর চরে কয়েকজন দৃষ্টিহীন নারীকে নিয়ে গঠন করেন ‘অন্ধ মহিলা সংস্থা’। ১৯৯৩ সালে নিবন্ধন পায় তার সংগঠন।

তিনি বলেন, সংস্থার কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ২০০৩ সালে সাভারের ফুলবাড়ীয়ায় ‘কোহিনূর চক্ষু হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৯ সাল থেকে অমর একুশে বইমেলায় নিজেই নিজের বই ফেরি করে বিক্রি করছেন জুঁই। বই বিক্রির টাকা জমিয়ে হাসপাতালের জন্য ব্যয় করছেন।

জুঁই বলেন, “আমি যখন প্রথম বইটা লিখেছি, ওটার মধ্যে লেখা ছিল, বই বিক্রিত টাকা আমি আমার চক্ষু হাসপাতালের জন্য ব্যয় করব এবং তাই করছি।”

ভবিষ্যতে হাসপাতালের পাশে একটি গ্রন্থাগার করার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

নিজের বইয়ের ফেরিওয়ালা দৃষ্টিহীন ‘কবি’



Hero

Welcome to the future of building with WordPress. The elegant description could be the support for your call to action or just an attention-catching anchor. Whatever your plan is, our theme makes it simple to combine, rearrange and customize elements as you desire.

Translate »