কত সিরিয়াস বিষয় নিয়ে দিন রাত লিখছি। কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই তেমন। যেইনা মজাচ্ছলে লুঙ্গি নিয়ে লিখলাম, অমনি পুরুষজাতি ক্ষেপে আগুন। আমাদের উপমহাদেশীয় সমাজের অধিকাংশ পুরুষ বিশ্বাস করেন ধর্ষণের কারণ মেয়েদের পোশাক। তাঁরাও সরবে না হলেও নীরবে বিশ্বাস করেন মেয়েদের পোশাকের কারণেই ধর্ষণ ঘটে, যাঁরা আজ বলছেন পুরুষের লুঙ্গি নিয়ে কথা বলার অধিকার কোনও মেয়ের নেই। আমি লুঙ্গি নিয়ে কথা বলার স্পর্ধা দেখিয়েছি বলে আমাকে নানা ভাবে হেনস্থা করছেন।
কেউ কেউ বলছেন, ‘প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি পুরুষের পোশাক লুঙ্গি’। তাঁদের কোনও ধারণা নেই যে বাঙালি পুরুষের নির্দিষ্ট কোনও পোশাক নেই। পোশাকের বিবর্তন প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। প্রাচীনকালে বাংলার পুরুষেরা গাছের বাকল পরতো। পরে কার্পাস তুলোর সুতোয় বানানো সেলাইবিহীন ল্যাংগোট পরতো। আরও পরে এসেছে ধুতি, তখন খাটো ধুতি পরতো। লুঙ্গি তো এই সেদিনকার।
কোনও কোনও বিজ্ঞ বলছেন ‘পোশাক ব্যাপার নয়, প্যান্ট পাজামা পরেও পুরুষেরা অশ্লীল আচরণ করতে পারে, সমস্যা মানসিকতায়, পোশাকে নয়।’ আমার যেন জানতে বাকি রয়েছে প্যান্ট-পরা পুরুষদের অশ্লীলতা সম্পর্কে, তাঁদের নারীবিদ্বেষী মানসিকতার ব্যাপারে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, এক ভিড়ের বাসে এক ভদ্রলোক প্যান্টের জিপার খুলে তাঁর সবেধন নীলমণিটি বের করে এক মেয়ের দিকে তাকিয়ে মাস্টারবেট করলেন, বীর্যবান পুরুষটির রসকষ ছিটকে পড়েছিল বাসে-বসা অনেকের গায়ে। পুরুষের ‘মানসিকতা’ নিয়ে মেয়েদের জ্ঞান দেওয়ার জন্য অন্তত পুরুষের দরকার নেই –তা সেই পুরুষেরা জানেন না, যাঁরা আগ বাড়িয়ে জ্ঞান দান করেন।
ছোটবেলা থেকেই মেয়েরা, বিশেষ করে বাংলায় যাদের জন্ম, দেখেছে হাটে মাঠে ঘাটে কীভাবে অচেনা ছেলেরা লুঙ্গি উঠিয়ে তাদের মূল্যবান ধন সম্পদ দেখিয়ে ফ্যাক ফ্যাক করে সশব্দে হাসে, এবং এই ভেবে তৃপ্তি পায় যে মেয়েদের বেশ অপমান করা গেল। মেয়েরা বড় হয়েও দেখে, লুঙ্গি পরা অনেক লোকই তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বার বার যৌনাঙ্গ স্পর্শ করেন। এটি দেখে মেয়েরা যে অস্বস্তিতে ভোগে, তা তাঁরা একেবারেই জানেন না, মনে হয় না। লুঙ্গি পরলেও আণ্ডারওয়্যার পরা উচিত বলে আমি মনে করি। তা না হলে পুরুষের ধনসম্পদ্গুলো বড় অরিক্ষিত অবস্থায় থাকে। লুঙ্গিকে আমি পোশাক হিসেবে পছন্দ না করলেও আমি কিন্তু বলিনি লুঙ্গিকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হোক। এমনিতে এটি একদিন বিলুপ্ত হবে, শাড়ি যেমন ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে।