পুরো নাম | সৌরভ চণ্ডীদাস গাঙ্গুলী /Sourav Ganguly |
ডাকনাম | দাদা,প্রিন্স অফ ক্যালকাটা, বেঙ্গল টাইগার, গড অফ অফসাইড |
জন্ম | ৮ জুলাই, ১৯৭২ |
বাবার নাম | চণ্ডীদাস গাঙ্গুলী |
মায়ের নাম | নিরুপা গাঙ্গুলী |
ক্রিকেট খেলায় মুখ্য ভুমিকা | প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক |
ব্যাটিংয়ের ধরন | বাঁহাতি ব্যাটসম্যান |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
টেস্ট অভিষেক | ২০ জুন ১৯৯৬ বনাম ইংল্যান্ড |
ও.ডি.আই অভিষেক | ১১ জানুয়ারি, ১৯৯২ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
শেষ টেস্ট ম্যাচ | ৬ই নভেম্বর ২০০৮, নাগপুর বনাম অস্ট্রেলিয়া |
শেষ ও.ডি.আই ম্যাচ | ১৫ই নভেম্বর ২০০৭, গোয়ালিয়র বনাম পাকিস্তান |
Early Life of Sourav Ganguly:
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীকে আমরা তো সবাই চিনি | বাঙালীর গর্ব, সৌরভ গাঙ্গুলীর জন্ম হয় ৮ই জুলাই ১৯৭২ সালে, দক্ষিন কোলকাতার বেহালা অঞ্চলের একটা সু-প্রতিষ্ঠিত পরিবারে |
তাঁর বাবর নাম চন্ডীদাস গাঙ্গুলী এবং মায়ের নাম নিরুপা গাঙ্গুলী | ছোটবেলা থেকেই সৌরভ ফুটবল খেলতে ভীষন ভালোবাসতেন | পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলাতেই তাঁর আগ্রহ ছিলো বেশি |
তিনি ও তাঁর দাদা স্নেহাশীষ গাঙ্গুলী একই সাথে বড় হয়ে ওঠেন চন্ডীদাস পরিবারে | তাঁর দাদাই আসলে ক্রিকেট খেলতেন কিন্তু পরে সৌরভকেও তাঁর বাবা চন্ডীদাস গাঙ্গুলী দশ বছর বয়সে, কোলকাতার একটা নামী ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দেন |
সৌরভ গাঙ্গুলী তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা নেন, কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুল থেকে এবং সেই স্কুলেরই ক্রিকেট একাডেমিতে তিনি যোগদান করেন একজন ক্রিকেট প্লেয়ার হিসাবে |
Cricket Career of Sourav Ganguly:
তিনি তাঁর জীবনের প্রথম ক্রিকেট সেঞ্চুরি করেন ওড়িশার আন্ডার-১৫ দলের বিরুদ্ধে | সেই খেলায় তাঁর অসাধারণ পারফর্মেন্স, তাঁকে করে দেয় সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক | এরপর ধীরে ধীরে সৌরভ গাঙ্গুলীর ক্রিকেট খেলা সকলকে মুগ্ধ করতে থাকে এবং দিকে দিকে তাঁর খেলার চর্চা ছড়িয়ে পরতেও শুরু করে খুব তাড়াতাড়ি |
অবশেষে তাঁর সব প্রতীক্ষার অবসান হয় ১৯৮৯ সালে, যখন তাঁকে বেঙ্গল ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচন করা হয় | কিন্তু অন্যদিকে, ঠিক সেই বছরই তাঁর দাদা স্নেহাশীষ গাঙ্গুলীকে বেঙ্গল ক্রিকেট দল থেকে অপসারিতও করা হয় |
১৯৯০ ও ১৯৯১ এই দুই বছর, রঞ্জি ট্রফিতে দারুন পারফর্মেন্স করার ফলে তাঁকে প্রথমবারের জন্য ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার জন্য সুযোগ দেওয়া হয়, ১৯৯২ সালে | সেই বছর ভারতের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের একটা ও.ডি.আই সিরিজ অনুষ্ঠিত হয় |
কিন্তু ডেবিউ ম্যাচে সৌরভ মাত্র ৩ রানে আউট হয়ে যান | যারফলে তাঁকে ভারতীয় ক্রিকেট দল থেকে অপসারিত করা হয় | দল থেকে বাদ পরার পর আবার সৌরভ গাঙ্গুলী রঞ্জি ট্রফি খেলতে শুরু করেন |
১৯৯৩-১৯৯৪ ও ১৯৯৪-১৯৯৫ এই দুই সিজিনে, তিনি Domestic Cricket-এ ব্যাপক পরিমান রান করেন ধারাবাহিক ভাবে | তাছাড়া দলীপ ট্রফিতেও তিনি ১৭১ রানের একটি সুন্দর ইনিংস খেলেন, যারফলে পুণরায় তাঁকে ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজে খেলার সুযোগ দেওয়া হয় |
প্রথম টেস্টে সৌরভ কিন্তু মোটেই খেলার সুযোগ পাননি, তিনি মাঠের বাইরে পরিবর্ত খেলোয়াড় হিসাবেই বসে ছিলেন গোটা প্রথম টেস্ট ম্যাচ |
দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচেও তিনি প্রায় অনিশ্চিতই ছিলেন কিন্তু শেষ মূহুর্তে নভজৎ সিং সিধুর শারীরিক অসুস্থতা, তাঁকে দলে খেলার সুযোগ করে দেয় | সেই টেস্ট ম্যাচেই আবার রাহুল দ্রাবিড়ও সুযোগ পান, প্রথমবারের জন্য ভারতের হয়ে খেলার |
আরো পড়ুন : বিরাট কোহলির জীবনী
তাঁরা দুজনেই তাঁদের প্রথম ডেবিউ ম্যাচে, সুন্দর দুটো সেঞ্চুরি করেন, ইংল্যান্ডের লর্ডস ক্রিকেট ময়দানে | সেই সিরিজের শেষ টেস্টেও সৌরভ সুযোগ পান | এরপর ইংল্যান্ডের তৃতীয় টেস্ট খেলা অনুষ্ঠিত হয় ট্রেন্ট ব্রিজে, যেখানে তিনি আবারও একটা সেঞ্চুরি করেন (১৩৬রান) |
Personal Life of Sourav Ganguly:
বিদেশের মাটিতে পরপর দুটো ঝড়ো ইনিংস খেলার পর, সৌরভের জায়গা পাকাপাকি ভাবে ভারতীয় ক্রিকেট দলে হয়ে যায় | ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে চরম সাফল্য নিয়ে ফিরে আসার পর সৌরভ গাঙ্গুলী ঠিক কিছু সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর ছোটবেলার প্রেমিকা ডোনা রায়কে নিয়ে পালিয়ে যান বিয়ে করার উদ্দেশ্যে |
তাদের এই বিয়ে নিয়ে দুই পরিবারেরই ভীষন অমত ছিলো প্রথমে, কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলায় এবং সবাই তাদের এই সম্পর্ককে মেনে নেন অবশেষে |
১৯৯৭ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে, দুই পরিবারের মত মতো সৌরভ ও ডোনা গাঙ্গুলীকে; হিন্দু প্রথা মেনে পুণরায় ভালোভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হয় | বিয়ের ঠিক সেই বছরেই সৌরভ শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১১৩ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন আর সেইসাথে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাহারা কাপে পর পর ৪টে ম্যাচে ম্যান অফ ম্যাচ হিসাবে সম্মানিত হন |
এছাড়াও ১৯৯৯ সালে সৌরভ গাঙ্গুলী শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৮৩ রান করেন এবং ২০০৭ সালে ভারতের চির প্রতিদ্বন্ধি পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও তিনি ২৩৯ রান করেন |
Team India & Captain Sourav Ganguly:
২০০০ সালে ভারতের অধিনায়ক হওয়ার পর, তিনি ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ভবিষ্যতই বদলে দেন | তাঁর অধিনায়কত্বের সময়কে আমরা ভারতীয় ক্রিকেটর স্বর্ণযুগ হিসাবে ধরতে পারি | বিদেশের মাটিতে কীভাবে জিততে হয়, সেটা হয়তো গাঙ্গুলী ছাড়া এত ভালোভাবে কেউই এর আগে শেখাতে পারেনি আর বর্তমানেও পারবেনা |
আগে বিদেশী খেলোয়াড়দের চোখ রাঙানী দেখে অনেক ভারতীয় ক্রিকেটাররাই জবাবে কিছু বলতে পারতো না | কিন্তু এখানেও সৌরভ গাঙ্গুলীই প্রথম শিখিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে বিদেশী খেলোয়াড়দের চোখ রাঙানীকে উপেক্ষা করে তাদের পাল্টা জবাব দিতে হয় |
তাঁর দৌলতেই ভারতীয় ক্রিকেট দল পেয়েছিলো কিছু অভাবনীয় প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের; যার মধ্যে বীরেন্দ্র সেহওয়াগ, আশিস নেহেরা, জাহির খান, যুবরাজ সিং, হরভজন সিং ও ভিভিএস লক্ষণ ছিলো অন্যতম |
তুমি হয়তো এটা বিশ্বাস করবেনা যে, ভারতের আরো এক সফলতম খেলোয়াড় তথা মহান অধিনায়ককেও দলে সুযোগ করে দেওয়ার নেপথ্যে স্বয়ং আমাদের মহারাজই ছিলেন | আমি যার কথা বলছি তিনি কিন্তু আমাদের সবার প্রিয় ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, যার ক্রিকেটিও কর্মকান্ড আজ গোটা বিশ্বে বিখ্যাত |
সত্যি, আজ যদি সৌরভ গাঙ্গুলী ভারতীয় ক্রিকেট জগতে না আসতেন; তাহলে আজ আমরা হয়তো এইসব প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খেলা দেখার সুযোগই পেতাম না |
আমার মতে, তিনি সত্যিই একজন মহান ক্রিকেটিও ব্যক্তিত্ব, যার থেকে আমরা প্রত্যেকটা দেশবাসী অনেক কিছু শিখেছি | তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য যা করেছেন, তা সত্যিই কোনদিন ভোলার নয় |
অবশেষে ভারতের এই মহান ক্রিকেটার তথা অধিনায়ক, ৬ই নভেম্বর ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে জীবনের শেষ টেস্ট খেলেন নাগপুরে | সেই ম্যাচে তিনি প্রথম ইনিংসে ৮৫ রান আর দ্বিতীয় ইনিংসে ০ রান করেন এবং তাঁকে দুবারই আউট করেন অস্ট্রেলিয়ার এক অনুভবি বোলার জেসন ক্রেজা |
Records and Achievements:
1. পৃথিবীর একমাত্র ক্রিকেটার যিনি পরপর ৪টে ম্যাচে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন |
2. দক্ষিন আফ্রিকার ক্রিকেটার এবি ডিভিলিয়ার্স পর তিনিই পৃথিবীর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান, যিনি দ্রুততম ৯০০০ ও.ডি.আই রানের অধিকারী |
3. তিনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ক্রিকেটের ইতিহাসে, প্রথম একজন ব্যাটসম্যান যিনি ৩টে সেঞ্চুরি করেন |
4. চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে তাঁর রানের রেকর্ড এখনো অবধি কোনো ক্রিকেটার ভাঙ্গতে পারেনি (১১৭ রান) |
5. তিনি পৃথিবীর সেই ৫জন ক্রিকেটারের মধ্যে একজন, যার নিজের ১০০০০ রান, ১০০টা উইকেট আর ১০০টা ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ড আছে |
6. ২৬শে মে, ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্বকাপে তিনি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৮৩ রান করেন |
7. তিনি তাঁর জীবনের প্রথম ডেবিউ টেস্টে ভারতের হয়ে সেঞ্চুরি করেন এবং শেষ টেস্টে করেন শূন্য রান |
আরো পড়ুন : ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর জীবনী
Awards:
*১৯৯৭ সাল – অর্জুন পুরস্কার
*১৯৯৮ সাল – Sports Person of the Year পুরস্কার
*২০০৪ সাল – পদ্মশ্রী পুরস্কার
*২০০৪ সাল – রামমোহন রায় পুরস্কার