ভূমিকা
ইউক্রেনে প্রতিষ্ঠিত এবং বর্তমানে ফ্রান্সের প্যারিস ভিত্তিক একটি কট্টর নারীবাদী সংগঠনের নাম হচ্ছে ‘ফেমেন’। সব ধরণের লিঙ্গবৈষম্য, বর্ণবাদ, সমকামীভীতি, পুরুষতান্ত্রিকতা, ধর্ম, আধিপত্যবাদ, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে এই নারীবাদী সংগঠনটি অভিনব উপায়ে প্রতিবাদ করেন। তাদের প্রতিবাদে প্রায়শই ধর্মবাদী, পুরুষতান্ত্রিকতার ধারক কিংবা অপরাজনীতিবিদগণ এতটাই আতঙ্কে থাকেন যে, তারা প্রতিবাদ জানাবে এরকম খবর পেলেই অনেক রাজনীতিবিদই এখন আর সেই সব সমাবেশে যাওয়ারই সাহস করেন না। নারীর খোলা স্তন যে কতটা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে, পৃথিবীর সবচাইতে ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ কিংবা ক্ষমতাবাদ ধর্মব্যবসায়ীও যে সামান্য খোলা স্তন দেখিয়ে প্রতিবাদ সহ্য করতে পারে না, এই সংগঠনটি তা প্রমাণ করে দিয়েছে। এমনকি, যেই পুতিন এবং ট্রাম্পকে সারা পৃথিবীর মানুষ সমীহ করে, তারা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকেন, কখন ফেমেন এর সদস্যরা চলে আসে।
এই লেখাটি যারা পড়ছেন তারা হয়তো ভাবতে পারেন, লেখাটি ফেমেনের পক্ষ বা বিপক্ষ বিষয়ে। আসলে সেটি সত্য নয়। এই লেখাটি তাদের প্রতিবাদের অধিকারের পক্ষে। কারণ পুরুষতন্ত্র, ধর্ম, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে র্যাডিক্যাল প্রতিবাদই হওয়া জরুরি।
ধর্ম অবমাননা বা ব্লাসফেমি
ফেমেন সংগঠনটি তাদের অবস্থানকে “র্যাডিক্যাল ফেমিনিজম” হিসাবে বর্ণনা করে। তারা বলেন যে, “ফেমেন তিনটি ম্যানিফেস্টোতে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তার একটি হচ্ছে নারীর ওপর যৌনশোষণ, একনায়কতন্ত্র এবং ধর্ম”। এই তিন জিনিসের বিরুদ্ধে ফেমেনের অবস্থান কঠোর এবং র্যাডিক্যাল।
ফেমেন সেই সাথে যৌন ব্যবসা, সমকামী বিদ্বেষ, বর্ণবাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। ইসলামিজম, শরিয়া আইন, নারীদের খৎনা বিষয়ে তারা কঠোরভাবে প্রতিবাদ করে। ফেমেন তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলেছে, “Femen – is sextremism serving to protect women’s rights, democracy watchdogs attacking patriarchy, in all its forms: the dictatorship, the church, the sex industry”.
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কাছে পঁতোয়াজ শহরে চলছিল ইসলাম ধর্মের কনফারেন্স। বিষয় ছিল ইসলামে নারীদের অধিকার। বক্তব্য রাখছিলেন ইমামরা। হঠাৎ মঞ্চে উঠে নিজেদের উন্মুক্ত বক্ষ প্রদর্শন করে প্রতিবাদে সামিল হলেন দুই ‘ফেমেন‘ সদস্য। সাথে সাথেই উত্তেজনায় পাগল হয়ে গেল মুসুল্লিগণ। মুসুল্লিদের কয়েকজন একজন ফেমেন সদস্যকে লাথিও মারেন। ইসলামে নারীর অধিকার আসলেই কতটুকু, তা জানতে সংশয় ডট কমের এই লেখাটি পড়ুন।
ফেমেনের কর্মীগণ কীভাবে উগ্র ধর্মের বিরুদ্ধে পালটা র্যাডিক্যাল পন্থায় প্রতিবাদ করে, তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো। যাদের অনুভূতি স্পর্শকাতর, তাদের এই ছবিগুলো না দেখাই উত্তম।
ছবিতে দেখুন, নামাজে দাঁড়িয়ে কোরআন পড়ছেন একজন ফেমেন সদস্যা। তারা মনে করেন, কোরআন পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক। তাই এর বিরুদ্ধে নগ্ন প্রতিবাদই জরুরি।
উপরের ছবিতে দেখুন, কোরআন, বাইবেল এবং তাওরাত নিয়ে নগ্ন প্রতিবাদ জানাচ্ছে ফেমেন।
তিউনেশিয়ার ফেমেন সদস্য আমিনা টাইলার আরবি ভাষায় তার বুকে লিখেছিলেন, “My body is mine and not the source of anybody’s honour”। মানে হচ্ছে, “আমার শরীর শুধুমাত্র আমার, কারো সম্মানের উৎস নয়।”
ফেমেনের সদস্যরা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
আমার শরীর আমার অধিকার
ফেমেন মনে করে, নারীর শরীরের ওপর ধর্ম, রাষ্ট্র এবং রাজনীতির অযাচিত কর্তৃত্ব আরোপ এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করা জরুরি।
এবোরশনের অধিকার
তারা মনে করে, যার শরীর তার অধিকার। এবং এবোরশন হচ্ছে নারীর অধিকার এবং নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। এখানে আর কেউ নাক গলাতে পারবে না।
একনায়কদের বিরুদ্ধে
যৌন ব্যবসার বিরুদ্ধে
ফেমেন মনে করে, নারীরা ভোগ্যপণ্য নয়। তাদের দিয়ে যৌন ব্যবসা করাবার বিরুদ্ধে লড়াই করে ফেমেন।
প্রকাশ্যে শিশুকে স্তন পান করানো
তারা মনে করেন, বাসে ট্রেনে বা পাবলিক স্পেসে শিশুর ক্ষুধা লাগলে মা অবশ্যই তাকে স্তন পান করাতে পারে। এই বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ বাধা দিতে পারে না।
ফেমেন এর কর্মীরা
উপসংহার
প্রতিবাদের ভাষা সম্পর্কে আমার ভিন্নমত থাকতে পারে, আমি মনে করি এরকম প্রতিবাদের চাইতে মুক্তচিন্তা প্রসার-লেখালেখি-গবেষণা-বিতর্ক বেশি কার্যকর, কিন্তু আমি ফেমেনের এই প্রতিবাদের অধিকারকে সমর্থন করি। তাদের প্রতিবাদের ভাষা যাই হোক না কেন। একজন পুরুষ যদি তার বুক দেখাতে পারে, একজন নারীরও ঠিক একই অধিকার থাকা জরুরি। সেটি দেখে তেড়েফুঁড়ে আসার কিছু নেই। কারন এটি ব্যক্তির সিদ্ধান্ত। তিনি দেখাবেন কী দেখাবেন না, সেটি সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার যেন তার থাকে। অন্য কারো নয়। উল্লেখ্য, এখানে অধিকার মানে হচ্ছে, উনি সেটি করবেন কী করবেন না, সেটি উনি সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্য কোন পক্ষ নয়।
তথ্যসূত্র
১। অফিশিয়াল ওয়রবসাইট
২। Commentary: The Femen Effect On Feminism
5 thoughts on “ফেমেন – পুরুষতন্ত্র, ধর্ম এবং প্রথা বিরোধিতার অধিকার | ১৮+”
Source: shongshoy