Tuesday, October 15, 2024
HomeHealth & Fitnessবদ অভ্যাস নয়, দারুণ সব উপকারিতা রয়েছে ভাত- ঘুমের | রাতে তাড়াতাড়ি...

বদ অভ্যাস নয়, দারুণ সব উপকারিতা রয়েছে ভাত- ঘুমের | রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা

বাংলাদেশে অনেকেই দুপুরের খাওয়ার পর কিছুটা ঘুমিয়ে নেন। যাকে বাংলায় বলা হয় ভাত-ঘুম। দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমানোকে যদিও অনেক সময় আলসেমি মনে করা হয়। কিন্তু দশ থেকে কুড়ি মিনিটের ভাত-ঘুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর পক্ষে এখন অনেক বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি রয়েছে। সব বয়সের জন্যই ভাত ঘুম উপকারী।

এমনকি নতুন এক গবেষণা বলছে, এটি হয়তো আপনাকে আরো বেশি দিন বাঁচতে সাহায্য করবে।

ভাত-ঘুমের সংস্কৃতি
ভাত-ঘুম নাকি বাঙালির বদ অভ্যাস। কিন্তু এর সংস্কৃতি রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশে। ইউরোপের অনেক ভাষায় ভাত-ঘুমকে বলা হয় ‘সিয়েস্তা’। আর ইংরেজিতে ‘পাওয়ার ন্যাপ’।

শব্দগুলো বিভিন্ন ভাষায় রয়েছে মানেই হল, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের নানা দেশে এর সংস্কৃতি রয়েছে।

ইউরোপের যে দেশগুলোতে খানিকটা গরম আবহাওয়া রয়েছে, যেমন গ্রীস ও স্পেনে সিয়েস্তা নামে পরিচিত ভাত-ঘুম সেখানকার মানুষের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বলা হয় দুপুর ২টার পরে এই দেশগুলো নাকি ঝিমিয়ে পড়ে। ইউরোপের কিছু শহরে এমনকি সেখানকার মানুষের সিয়েস্তার আইনি অধিকার রয়েছে।

রিফ্রেশ বাটন
দিনভর নানা কাজের চাপের মাঝে কম্পিউটারের ‘রিফ্রেশ বাটনের’ মতো কাজ করে ভাত-ঘুম। দুপুরের পর দিনের বাকি সময়টুকু সতেজ বোধ করা এবং মন মেজাজ ভালো রাখতে ভাত-ঘুম বেশ কাজে আসে।

যে ধরনের কর্মশক্তি নিয়ে দিন শুরু হয় সেটি দিন গড়ানোর সাথে সাথে সেই কর্মশক্তি কমে আসতে শুরু করে। ন্যাপ বা ভাত-ঘুম শরীরের কর্মশক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে, বলছেন লন্ডনের ঘুম বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান দ্যা স্লিপ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, ঘুম বিশেষজ্ঞ গাই মেডোজ।

‘আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি, আমাদের মস্তিষ্কে এডেনোসিন নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়তে থাকে। আমরা যত বেশি সময় ধরে জেগে থাকি, আমাদের মস্তিষ্কে এর উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শরীরে ঘুম-ভাব তৈরি হতে থাকে।”

গাই মেডোজ বলছেন, ‘যখন আমরা ন্যাপ নেই তখন এডেনোসিনের ব্যবহার কমে আসে, এটি সংরক্ষিত হয়। যার ফলে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সতেজ অনুভব করি, মেজাজ ভালো বোধ করি।’

এর ফলে বিকেলের দিকে কাজে মনোযোগ বেশি দেয়া সম্ভব হয়, কাজে ভুল করার সম্ভাবনা কমে।

তার মতে, ভাত-ঘুমের সময়কাল হওয়া উচিৎ ১০ থেকে ২০ মিনিট। ভাত-ঘুম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তারমানে হৃদপিণ্ড ও কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

আর শরীরের এই যন্ত্রগুলো ভালো থাকলে আরো অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবে।

ঘুম বিষয়ক গবেষক এবং ‘টেক এ ন্যাপ, চেঞ্জ ইওর লাইফ’ বইয়ের লেখক সারা মেডনিক বলছেন, ন্যাপ সবচেয়ে বেশি কাজ করে যদি এর সময়কাল ৬০ থেকে ৯০ মিনিট হয়।

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা

‘যদি আমরা মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি, সৃজনশীলতা, কোনো কিছু বোঝার ক্ষমতা বাড়াতে চাই তাহলে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ন্যাপ দরকার হয়।’

মনের উপরে প্রভাব
ঘুম মন ভালো রাখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইশরাত শারমিন রহমান বলছেন, শরীরে মন ভালো রাখার যে হরমোনগুলো রয়েছে ঘুম সেগুলোর ভারসাম্য তৈরি করে ঘুম। বেশি সময় জেগে থাকলে সেই ভারসাম্য নষ্ট হয়। ঘুমালে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা হয়, চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কম ক্ষরণ হয়। মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়, তাতে মনের চাপ, উদ্বেগ দূর হয়, মুড ভালো থাকে, চিন্তার প্রক্রিয়া ভালো কাজ করে।’

Read more: ফেসবুক প্রোফাইল থেকে টাকা আয়ের উপায়ঃ প্রফেশনাল মোড (পরীক্ষামূলক)

যেভাবে উৎকৃষ্ট ভাত-ঘুম নিতে পারেন
কেউ কেউ আছেন কোথাও গা এলিয়ে দিলেই ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু সবাই তা পারেন না। আর কাজে থাকা অবস্থায় চেয়ার, টেবিল, সোফায়, আশপাশে মানুষের উপস্থিতি ও কথাবার্তার মধ্যে সবাই সবসময় ভাত-ঘুম আরাম করে দিতে পারেন না। কিন্তু চারপাশে পরিবেশে হালকা পরিবর্তন এনে উৎকৃষ্ট ভাত-ঘুম নেয়া সম্ভব।

দিনের মাঝামাঝি সময়ে যেহেতু ৯০ মিনিটের ভাত-ঘুম দেয়া মুশকিল তাই ১০ থেকে ২০ মিনিটকে ভাত-ঘুমের জন্য আদর্শ মনে করা হয়। ড. মেডোজ বলছেন, ন্যাপ হচ্ছে সাঁতার কাটা বা বাইসাইকেল চালানোর মত।

অনুশীলনের মাধ্যমে আরো ভালো হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শরীরকে ভাত-ঘুমে অভ্যস্ত করে তোলা যায়।

ড. মেডোজ বলেন, ‘যদি ভাত-ঘুম দিতে চান তাহলে শুরুতেই ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে নিন যাতে কাজের মধ্যে বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে না থাকেন। প্রতিদিন সময় না বদলে ঠিক একই সময় ন্যাপ নেয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে শরীরে ঘুমের অভ্যস্ততা তৈরি হবে, এবং ওই সময় এলেই শরীর ঘুমাতে চাইবে। শরীরে এই অভ্যস্ততা তৈরি করতে, শরীরে ভাত-ঘুমের ঘড়ি তৈরি করতে তিন মাসের মতো সময় লাগে।’

তিনি বলছেন, ‘অনেকে মনে করেন দিনের মাঝামাঝি সময়ে তাদের পক্ষে এভাবে ঘুমানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা স্টাডি করে দেখেছি একদল অংশগ্রহণকারীকে ঘুমাতে বলা হয়েছে। যাদের মাথায় বিদ্যুৎ তরঙ্গ পড়ার জন্য স্লিপ-নোডস লাগানো ছিল। তারা ৬৫ শতাংশই ঘুম থেকে ওঠার পর বলেছে তারা জেগে ছিল। কিন্তু আসলে তারা ঘুমিয়েছে। এর অর্থ হলো মানুষ ঘুমিয়ে পড়লেও অনেক সেটা বোঝে না।’

জোর করে শরীরকে ঘুম পাড়ানো যায় না। কিন্তু পরিবেশ তৈরি করে নিলে প্রায়শই ভালো ভাত-ঘুম সম্ভব। যেভাবে উৎকৃষ্ট ভাত-ঘুম নিতে পারেন সেনিয়ে ডা. ইশরাত শারমিন রহমান কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন।

  • ভাত-ঘুম নিতে চাইলে দিনের এই সময় আসার আগে চা কফি নয়।
  • সময়ের মিনিট পাঁচেক আগে কাজ বন্ধ করুন, উদ্দীপনা তৈরি করে এমন কিছু থেকে সরে আসুন, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নিন।
  • বেশি গরম বা ঠাণ্ডা না, স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয় এমন কোনো জায়গায় চেয়ার বা সোফায় আরাম করে বসুন। বাসায় থাকলে বিছানায় শুয়ে পড়ুন।
  • ঘরের আলো কমিয়ে দিন, শব্দের উৎস নিয়ন্ত্রণ করুন।
  • একটুখানি পানি খান।
  • যদি চোখ ঢাকার মতো কিছু থাকে সেটি দিয়ে চোখ দিয়ে ঢাকুন, স্থির থাকুন, দীর্ঘ নিশ্বাস নিন।

সোজা কথায় শরীর ও মনকে শিথিল করুন, চোখ বুজে মন থেকে নেতিবাচক, উদ্বেগ সৃষ্টি করে এমন চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। ডা. ইশরাত শারমিন বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এতে ঘুম আসে, তবে সবার ক্ষেত্রে সব সময়ে কাজে নাও লাগতে পারে।

যেভাবে ভাত-ঘুম নয়
২০ থেকে ৯০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ভাত-ঘুম নেয়া যাবে না। সেটাকে আর ভাত-ঘুম বলা যাবে না। সেক্ষেত্রে সেটা হবে গভীর ঘুম।

অনেকেই দুপুরের পর বেশি সময় ঘুমিয়ে ওঠার পর শরীরে একধরনের অনুভূতির কথা বলেন যাকে কথ্য ভাষায় বলে শরীর ‘ম্যাজম্যাজ’ করা, তেমন অনুভূতি হতে পারে। কারণ শরীরে গভীর ঘুমের বোধ চলে এসেছে কিন্তু পুরো ঘুম হয়নি।

ডা. ইশরাত শারমিন বলছেন, যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাদের ভাত-ঘুম নেয়া উচিৎ নয়।

তাহলে তাদের রাতে শরীর ক্লান্ত হতে পারে না অথবা দেরি হয়।

ঘুম হবে কি না সেনিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া যাবে না। সেটি না আসার একটি কারণ।

যারা রাতে ভালো ঘুমিয়েছেন এবং যারা ভালো ঘুমাতে পারেননি তাদের সবার ক্ষেত্রেই ভাত-ঘুম কাজে দেয়।

ডা: শারমিন বলছেন, অনেক সময় ঘুমাতে না পারলেও কুড়ি মিনিটের মতো শুধু চোখ বুজে থাকলেও ক্লান্তি দূর হয়।

এখন হয়ত বলাই যায় যে ভাত-ঘুমের পর কিছুটা যে অপরাধবোধ কাজ করে তা বোধহয় ঝেড়ে ফেলতে পারেন।

সূত্র : বিবিসি

Read more: দুই মাথা বিশিষ্ট জমজ দেখতে মানুষের ঢল

 

 

 

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা, দুপুরে ঘুমালে কি মোটা হয়, ঘুমের ওষুধের উপকারিতা, ঘুমের হরমোন

রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর হাদিস, রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কখন, সকালে ঘুমানোর অপকারিতা, ঘুমের হরমোন, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়, ঘুম থেকে উঠার সুন্নত সমূহ, রাত নিয়ে হাদিস

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

বদ অভ্যাস নয়, দারুণ সব উপকারিতা রয়েছে ভাত- ঘুমের | রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা



Hero

Welcome to the future of building with WordPress. The elegant description could be the support for your call to action or just an attention-catching anchor. Whatever your plan is, our theme makes it simple to combine, rearrange and customize elements as you desire.

Translate »