বাংলাদেশের মন্ত্রী মুরাদ হাসান খুব ব্রুটালি মাহিকে ধর্ষণ করতে চেয়েছে। আমরা যারা তার সেই ফোনালাপ শুনেছি , তারা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারি যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লোকটি অসংখ্য মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। তার চালচলন আচার ব্যবহার সব বলে দেয় যে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। কে তাকে এত বর্বর হওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছে? এও অনুমান করতে পারি, কে। লোকটি মাতাল হয়ে মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। নেত্রীর আশকারা তাকে কোথায় উঠিয়েছে! উঠিয়েছে নাকি নামিয়েছে? আমি তো বলবো মানুষ হিসেবে তাকে অনেক নিচে নামিয়েছে।
লোকটি আসলে জামাতপন্থী। আমাকে চেনে না, জানে না, আমার কোনও বই পড়েনি, আমার আদর্শ আর বিশ্বাসের, আমার সততা এবং সংগ্রামের কিছুই না জেনে আমার সম্পর্কে বিজ্ঞের মতো বলে গেল কতগুলো কুৎসিত মিথ্যে। ঠিক জামাতিরা যেভাবে বলে, যা বলে। কী অন্যায় করেছি আমি? আমি নাকি কাপড় তুলে বা খুলে কোথাও প্রশ্রাব করেছি। প্রশ্রাব করলে তো কাপড়ে করা ঠিক নয়, কাপড় খুলে বা তুলেই করতে হয়। আমাকে প্রশ্রাব করতে দেখেছে জামাতিরা, ওয়াজিরা আর মন্ত্রী মুরাদ। আমি নিশ্চয়ই তাহলে এমন জায়গায় প্রশ্রাব করেছি যেখানে জামাতিরা আর ওয়াজিরা গিজগিজ করছিল, আর তাদের দোসর হিসেবে মন্ত্রী মুরাদ সেখানে উপস্থিত ছিল। কোনও মসজিদে, ওয়াজ মাহফিলে বা কোনও ইজতেমায়! নিশ্চয়ই। তা না হলে ওরা সবাই আমাকে কী করে প্রশ্রাব করতে দেখলো! অনেকদিন শুনেছি জামাতি আর আমাতি বা আওয়ামি লীগে কোনও তফাৎ নেই। ধীরে ধীরে টের পেয়েছি, আসলেই কোনও তফাৎ নেই।
জামাতিরা যেভাবে আমার বয়ফ্রেন্ডের সংখ্যা গোনে, ঠিক একই ভাবে মন্ত্রী মুরাদও গুনেছে। আমার নাকি অনেক বয়ফ্রেন্ড। তা থাকুক না অনেক। আমি তো পুলিশ, এনএসআই, ডিজিএফ ইত্যাদি দিয়ে কোনও পুরুষকে জোর করে থ্রেট করে তুলে এনে বয়ফ্রেন্ড বানাইনি! মাহির যৌনাঙ্গকে মন্ত্রী যেমন নিজের সম্পত্তি ভেবেছে, তেমনি দেশের তাবৎ মেয়ের যৌনাঙ্গকেও হয়তো নিজের সম্পত্তিই ভেবে নিয়েছে, তাই মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড নিয়ে তার এত মাথাব্যথা।
ধর্ষক মুরাদ বললো, আমাকে কোনও দেশই নাগরিকত্ব দেয় না। এও জামাতি স্টাইলের মিথ্যে। প্রশ্ন হলো, অন্য দেশের আমাকে নাগরিকত্ব দিতে হবে কেন? আমি তো একটি দেশের নাগরিক, যে দেশে ধর্ষক মুরাদ বহাল তবিয়তে বাস করছে! আমি যে দেশের বাইরে, আমাকে যে আমার দেশে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে মুরাদের ”আম্মা”, এ কি আমার অপমান? নাকি তাদের, যারা ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমার নাগরিক অধিকার অন্যায়ভাবে লঙ্ঘন করছে আজ কয়েক যুগ! ধর্ষকদের দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের জায়গা হয় না। হয়তো এ কারণেই আমার জায়গা হয় না। আর আমার জায়গা হয় না বলে ধর্ষকদের সে কী আনন্দ!
লোকটির দুটো তিনটে ইন্টারভিউ, ফোনালাপ ইত্যাদি দেখে বুঝলাম, লজ্জা নেই। কারও পা চাটতেও লজ্জা নেই, কাউকে থ্রেট করতে, অশ্লীল গালিগালাজ করতে, কাউকে ধর্ষণ করতেও লজ্জা নেই। লোকটি এমন বীভৎস হয়ে উঠতে পারছে কার আহলাদে? আমরা জানি কার আহলাদে। আম্মা কবে তার পুত্রদের হাত থেকে অসহায় মেয়েদের বাঁচাবেন তা স্বয়ং আম্মাই জানেন।
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত তসলিমা নাসরিনের