“নাযিয়া সদ্য ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। বাচ্চার বয়স ১৭ দিন। নিজের বাচ্চার যত্নের জন্য কোন ত্রুটি রাখতে নারাজ নাযিয়া। কিন্তু বুকের দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে নাযিয়ার কিছু অনিহা কাজ করছে। প্রথম কিছুদিন ঠিক মত দুধ পান করালেও এখন কিছু সমস্যার কারনে সে দিন কে দিন বুকের দুধ পান করানোর প্রতি একটু অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। কিন্তু একি সাথে নাযিয়া একটু চিন্তিত তার বাচ্চার শারীরিক বিকাশের কথা ভেবে কারন সবাই বলে বাচ্চা জন্মের পর প্রথম ৬ মাস বাচ্চা কে শুধু মাত্র বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছুই পান করানো যাবে না”
শিশু জন্মের পর প্রথম ৬ মাস তাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো খুব দরকারি কারন প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ থেকেই শিশু যাবতীয় পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকে। অভিজ্ঞ ডক্টর রাও তাই সদ্য মায়েদের কে প্রথম ৬ মাস বাচ্চা কে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে বলেন। কিন্তু অনেক মায়েরা কিছু সমস্যার জন্য সন্তান কে ব্রেস্টফিডিং বা বুকের দুধ পান করাতে চান না অথবা কিছু দিন বুকের দুধ পান করিয়ে তা বন্ধ করে দেন।
বুকের দুধ পান করানোর প্রতি অনিহা বা হটাত করে বুকের দুধ পান করানো বন্ধ করে দেয়ার পেছনে কিছু কমন সমস্যা থাকে যার কারনের মায়েরা বুকের দুধ পান করানো বন্ধ করেন। চলুন দেখে নেই ব্রেস্ট ফিডিং এর কমন ৬ টি সমস্যা এবং সে গুলোর সমাধানঃ
১। ব্রেস্টে পেইন হওয়া
এটা খুব ই স্বাভাবিক যখন আপনি প্রথম আপনার বাচ্চা কে ব্রেস্ট ফিডিং করাবেন। আর এটা যদি আপনার প্রথম বার হয় তাহলে পেইন হওয়া টা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বাচ্চা দুধ খাওয়া শুরু করার পর ব্যাথা শুরু হয় আর সেই ব্যাথা ১ মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার বাচ্চার মুখের পজিশন ঠিক নেই কারন সঠিক পজিশনে না থেকে যদি বাচ্চা দুধ থেকে থাকে তাহলে সাধারনত ব্রেস্টে পেইন বা ব্যাথা অনুভুত হয়।
করনীয়ঃ
বাচ্চা কে এমন ভাবে ব্রেস্ট ফিডিং করাবেন যাতে তার মুখের পুরো অংশ টা ব্রেস্টের নিপল কে কাভার করে দেয়। মনে রাখবেন ব্রেস্ট যদি ঠিক মত বাচ্চার মুখে না থাকে তাহলে একদিকে যেমন আপনার পেইন হতে পারে অন্য দিকে বাচ্চা ঠিক মত দুধ নাও পেতে পারে। তাই বাচ্চার পজিশন টা খুব গুরুত্বপূর্ণ এখানে। আর যদি এমন হয় যে বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে তবুও ব্যাথা হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ব্রেস্ট যথেষ্ট শক্ত বা শুষ্ক। সেই ক্ষেত্রে একটু ঢিলেঢোলা পোশাক পড়া ভালো।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি! তিনটি জনপ্রিয় অ্যাপ নিষিদ্ধ করল গুগল
২। কর্কশ বা শুষ্ক নিপল
ব্রেস্টফিডিং এর সময় আরেকটি সমস্যা হল কর্কশ বা শুষ্ক নিপল। কর্কশ নিপলের অনেক গুলো কারন থাকতে পারে এর মধ্যে অন্যতম কারন টি হল বাচ্চার ঠিক মত দুধ না খাওয়া। ব্রেস্টফিডিং এর প্রথম সপ্তাহে যখন প্রথম আপনি ব্রেস্টফিডিং করাবেন প্রথমে কিছু ব্লাড বের হতে পারে তবে এতে চিন্তিত হবার কিছু নেই।
করনীয়
এই ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা টা যেহেতু বাচ্চার ঠিক মত পজিশন না হওয়া তাই এই ক্ষেত্রে বাচ্চা কে ব্রেস্টফিড করানোরও সময় খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা ঠিক মত নিপল এ মুখ দিয়েছে কিনা এবং বাচ্চা ঠিক মত ব্রেস্ট তার মুখে নিয়েছে কিনা। এছাড়া প্রথম দিকে বাচ্চা কে অল্প অল্প বিরতি দিয়ে একটু পর পর দুধ খাওয়াতে হবে যাতে বাচ্চার খুব বেশি ক্ষুধা না আর সে ধীরে ধীরে দুধ পান করে।
লাভ জিহাদ আইন: ভারতে হিন্দু-মুসলিম প্রেম হুমকিতে
৩। অতিরিক্ত দুধের সরবরাহ
মায়ের বুকে অতিরিক্ত দুধ অনেক সময় বাচ্চার দুধ না খাওয়ার কারন হয়ে দাড়াতে পারে। অতিরিক্ত দুধের কারন বাচ্চা ঠিক মত দুধ খেতে পারে না সে ক্ষেত্রে বাচ্চা দুধ থেকে মুখ সরিয়ে নেয়।
যৌন আসক্তি বলে কি সত্যিই কিছু আছে?
করনীয়ঃ
এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে মায়ের উচিত হবে বাচ্চা কে দুধ খাওয়ানোর আগে হাত দিয়ে ব্রেস্ট কে একটু প্রেস করে নিতে যাতে দুধের ফ্লো ঠিক থাকে এবং ব্রেস্ট একটু নরম হয়ে যায় যা বাচ্চার জন্য খুব আরামদায়ক ও বটে।
৪। মাস্টিটিস
মাস্টিটিস একটা ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন যেটা বাচ্চা কে দুধ খাওয়ানো শুরু করার প্রথম সপ্তাহে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু লক্ষন দেখেই সেটা সহজে বোঝা যায় যে এটা মাস্টিটিস কিনা। সব চেয়ে সহজ লক্ষন টি হল বাচ্চা কে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর প্রথম সপ্তাহে জ্বর এবং ব্রেস্টে ব্যাথা অনুভত হলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নেয়া যায় মাটিস্টিস আর লক্ষন।
করনীয়ঃ
মাস্টিটিস বা ব্রেস্টফিডিং এর প্রথম সপ্তাহে জ্বর জ্বর অনুভুত হলে সরাসরি ডক্টরের সাথে কন্সাল্ট করা ভালো কারন যেহেতু এটা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ তাই অ্যান্টিবায়োটিক কিছু খাওয়া লাগতে পারে ( ডক্টরের মতামত অনুযায়ী)
৫। ব্রেস্টফিডিং এর সময় বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়া
অনেক মা এই ব্যাপারটায় খুব বেশি বিরক্ত থাকেন এই জন্য যে বাচ্চা দুধ খেতে খেতে অনেক সময় ঘুমিয়ে পরে বা মুখে ব্রেস্ট ফিক্স করে কিছু সময় খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। আসলে বাচ্চা জন্মের পর প্রথম কিছু মাস একটু বেশিই ঘুমিয়ে থাকে তাই এটা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই।
করনীয়ঃ
এই ক্ষেত্রে যেটা করা যায় সেটা হল বাচ্চা কে একটি ব্রেস্ট কিছুক্ষণ খাওয়ানোর পর আবার অন্য ব্রেস্ট খাওয়ানো তাহলে বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগ কম থাকে আর একি সাথে দুধের ভারসাম্য বজায় থাকে।
৬। পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ না থাকা
অনেক মায়ের একটা কমন প্রব্লেম থাকে সেটা হল পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ না থাকা। পর্যাপ্ত দুধ না থাকার ব্যাপার টি আসলে ২ টি কারনে হতে পারে ১) যদি বাচ্চা ঠিক মত দুধ পান করতে না পারে ২) যদি আসলেই মায়ের বুকে দুধ না থাকে
মায়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ না থাকার আরেকটি অন্যতম কারন হল সার্জারি। যদি মায়ের আগে কখনো ব্রেস্ট সার্জারি হয়ে থাকে তাহলে ব্রেস্ট এ দুধের পরিমাণ কম থাকতে পারে। আবার কিছু সময় মায়ের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য এর অভাবেও মায়ের বুকের দুধের ঘাটতি হতে পারে।
করনীয়ঃ
মায়ের বুকের দুধের পর্যাপ্ততা না থাকলে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়া অনেক বড় একটা বোকামি। কারন উপরের ২ টি কারনের প্রথম কারন টি যদি হয়ে থাকে তাহলে হয়ত বাচ্চা কে ঠিক মত পজিশন করে দুধ খাওয়ালে বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ পেতে পারে আর যদি দ্বিতীয় কারন হয়ে থাকে মানে যদি পর্যাপ্ত দুধ বুকে না থাকে তাহলে একজন অভিজ্ঞ ডক্টরের সাথে কন্সাল্ট করে এর বিজ্ঞানসম্মত সমাধান খুজে নিতে হবে কিন্তু দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত হবে না।