বাংলাদেশের শিক্ষা বিভাগ দেশটির মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল গুলোকে বয়:সন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে।
দেশটির ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে শিক্ষার আওতায় আসবে, আর এজন্য মূল উপকরণ হিসেবে হিসেবে ব্যবহৃত হবে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল বা ইউএনএফপিএ’র তৈরি করা শাহানা কার্টুন।
কর্তৃপক্ষ বলছে কিশোর কিশোরীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন ক্লাসে শাহানা কার্টুনের মাধ্যমে শেখানোর প্রস্তুতি তারা এর মধ্যেই সম্পন্ন করেছেন।
বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বলছে দেশটির মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ২১ হাজার স্কুলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে এ মূহুর্তে শিক্ষার্থী আছে এক কোটিরও বেশি।
বিজ্ঞাপন
নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকেই এসব শিক্ষার্থীদের বয়:সন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং জেন্ডার সমতা বিষয়গুলোতে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা দেয়া হবে।
অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বলেছেন বয়:সন্ধিকালের স্বাস্থ্যৗ সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা পাওয়া আর শিক্ষার্থীও অভিভাবকসহ সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
“শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-সবাইকে সচেতন করাই আমাদের লক্ষ্য যাতে এ বয়সের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনো ভ্রান্ত ধারণা তৈরি না হয়। প্রতিটি স্কুলে একটি কর্নার থাকবে যেখানে নিজেদের মধ্যে কথা বলবে শিক্ষার্থীরা এবং খেলার মাধ্যমেই এসব বিষয়ে কথা বলতে বলতে জড়তা কাটবে তাদের। এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে”।
মিস্টার ভট্টাচার্য বলছেন শিক্ষার্থীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শেখানোর জন্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউএনএফপিএ’র শাহানা কার্টুন যা ইতোমধ্যেই উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা অফিসগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় আসছে বড় পরিবর্তন
কওমি মাদ্রাসায় কারা পড়ে, কী পড়ে, হঠাৎ কেন খতিয়ে দেখছে সরকার?
একটি দুর্ঘটনার ছবি যেভাবে পুরো পরিবহন খাতের নৈরাজ্যের প্রতীক
‘৬০ শতাংশের বেশি শহুরে কিশোর-কিশোরী মানসিক চাপে ভুগছে’
প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সব স্কুল।
ছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,
যৌন এবং প্রজনন শিক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্কুলগুলো, শুরু হবে জানুয়ারি থেকে।
কোন শ্রেণীতে কী শেখানো হবে
কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা কার্টুনটির চতুর্থ পর্ব যেখানে বয়:সন্ধিকালের শারীরিক পরিবর্তন ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বিসয়ে জানতে পারবে।
একই সঙ্গে থাকবে স্বপ্নদোষ ও ভ্রান্তধারণার মতো বিষয়গুলোও।
সপ্তম শ্রেণীতে কার্টুনটির প্রথম পর্বে বলা হবে বাল্যবিবাহ, ২০ বছর বয়সের আগে সন্তান জন্মদানে স্বাস্থ্যগত জটিলতা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও আইনি সহায়তার মতো বিষয়গুলো।
অষ্টম শ্রেণীতে কার্টুনটির তৃতীয় পর্বে বলা হবে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ, কন্যা শিশুর যত্ন, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, প্রসব পরবর্তী ফিস্টুলা সম্পর্কে।
আর নবম ও দশম- উভয় শ্রেণীতে দেখানো হবে কার্টুনটির ৫ম ও ২য় পর্ব যেখানে নারীর পেশাগত বৈচিত্র্য, যৌন হয়রানি, নির্যাতন, যৌতুকের মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে।
শিক্ষণ পদ্ধতি কেমন হবে
ক্লাসের শুরুতেই কুশল বিনিময়ের পর শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইবেন যে তারা কোনো ভিডিও দেখতে আগ্রহী কি-না আর ভিডিও দেখানোর আগে ওই ভিডিও’র বিষয়বস্তু নিয়ে শিক্ষক কোন ধারণা দেবেন কি-না।
অর্থাৎ ভিডিও দেখানোর আগে শিক্ষক সেটি দেখানোর একটি পরিবেশ তৈরি করবেন এবং ভিডিও চলাকালীন শিক্ষক কোন মন্তব্য করবেন না।
ভিডিও উপস্থাপন শেষ হলে শিক্ষার্থীদের দলীয় বা গ্রুপ ভিত্তিক কাজ করতে দেয়া হবে। পরপর দুটি বেঞ্চের শিক্ষার্থীরা মিলে একটি দল হবে ।
আর প্রথম বেঞ্চের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বেঞ্চের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়ে দলীয় কাজ করবেন। এসময় তারা ভিডিওর বিষয়বস্তু, বিষয়বস্তুর আলোকে থাকা উদাহরণ, ভিডিওতে নেই এমন কোন অভিজ্ঞতা তাদের হয়েছে কি-না বা অন্য কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানে কি-না এসব নিয়ে কথা বলবেন।
পাশাপাশি তারা দেখবেন ভিডিওতে সমস্যার সমাধান কিভাবে করা হয়েছে আর স্থানীয় অবস্থা বিবেচনা করে সমাধানের আর কোন উপায় যায় কি-না তা নিয়েও তারা আলোচনা করবেন।
গ্রুপ ভিত্তিক আলোচনা শেষে প্রতিটি গ্রুপ থেকে একজন দলীয় কাজ উপস্থাপন করবেন। যে দল উপস্থাপন করবে তাদের অন্য দল প্রশ্ন করার সুযোগ পাবে।
প্রশ্নের সঠিক উত্তর না এলে তখন শিক্ষক সঠিক উত্তর পেতে সহায়তা করবেন।
এভাবে দলীয় কাজ ও প্রশ্নোত্তর শেষ হলে শিক্ষক ভিডিওটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবেন। কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ গেলে সেটি তিনি আলোচনায় আনবেন।
সর্বশেষ ভিডিওটি পাঠ্যপুস্তকের কোন অংশের সাথে সম্পর্কিত সেটি শিক্ষার্থীদের জানাবেন শিক্ষক ও পাঠের বিষয়বস্তু আলোচনা করবেন।
মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হচ্ছে প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা।
শিক্ষকরা বলছেন সব স্কুলেই এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া গেছে।
ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মারুফা বেগম বলছেন তার স্কুলে ল্যাব ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া প্রোজেক্টরের মাধ্যমেও পর্যায়ক্রমে ক্লাসগুলোতে শিক্ষা দেয়া হবে।
বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরেই কিশোর কিশোরীদের যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ে শেখানোর জন্য দাবি উঠছিল, কিন্তু দেশটিতে যৌন শিক্ষা সম্পর্কে কথা বলতে গেলে নানা চ্যালেঞ্জও কাজ করে। বিশেষ করে অনেকেই আছেন যারা এগুলো নিয়ে আলোচনাকে সমর্থন করতে চান না।
এখন স্কুলে শিক্ষার্থীদের শেখানোর ক্ষেত্রে এগুলো কোন বাধা হবে কিনা জানতে চাইলে মারুফা বেগম বলেন এর আগে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিষয়ে ভিডিও লার্নিং কর্মসূচি পালিত হয়েছে যাতে অভিভাবকরা সহযোগিতা করেছেন।
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন শারমিন ইয়াসমীন বিবিসি বাংলাকে বলছেন স্কুল পর্যায়ে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে এবারের এ উদ্যোগটি একটি সুস্থ জনগোষ্ঠী নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারবে। সে কারণে কর্মসূচি শুরুর পর এটিকে সঠিক মনিটরিংয়ের আওতায় রাখার ওপর জোর দেন তিনি।
তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বলছেন দেশের প্রতিটি স্কুলে যাতে এ কর্মসূচি সঠিকভাবে পালিত হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যা কার্যকর হবে বলেই আশা করছেন তারা।
Source of BBC news