ভূমিকা
আমাদের সমাজে এই বর্তমান সভ্য পৃথিবীতেও কিছু মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাদের অসম্মান করা হয়, তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হয়, তাদের হিজড়া নাম দিয়ে সমাজ ও পরিবার থেকে দুর করে দেয়া হয়, যা অত্যন্ত অমানবিক এবং দুঃখজনক। তথাকথিত এই হিজড়াদের সমাজ থেকে বের করে দেয়ার পেছনে ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যা আমরা এই লেখাটিতে আলোচনা করবো। কিছুদিন আগে ফেইসবুকে বুখারী শরীফ থেকে একটি হাদিস পোস্ট করেছিলাম, যেখানে কয়েকজন ইসলামিস্ট এসে দাবী করলেন, হাদিসটির বাঙলা অনুবাদে ভুল রয়েছে। হাদিসটি ছিল হিজড়া সম্পর্কে, তাদের বিতাড়িত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন নবী মুহাম্মদ।
নবী মুহাম্মদ কি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন?
পরবর্তীতে বিষয়টি ভুলে যাওয়ায় এই বিষয়ে আর আলোচনা হয় নি। বেশ কিছুদিন পরে আবার হাদিসটির কথা মনে হলো, তাই ভাবলাম, হাদিসটি নিয়ে একটু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। তার আগে আমাদের জেনে নেয়া জরুরি, হিজড়া কাকে বলে। উল্লেখ্য, এই প্রবন্ধে হিজড়া শব্দটি দিয়ে তাদের নির্দেশ করা হলেও, আমি কোন অবস্থাতেই এই শব্দটির সাথে একমত নই। আমার ইচ্ছে হচ্ছে, মানুষ আর এই শব্দটি তাদের জন্য ব্যবহার না করুক। কিন্তু তাদের প্রতি ঘটে যাওয়া অমানবিকতা বোঝাতেই আমি এই শব্দটি এখানে ব্যবহার করছি।
হিজড়া কাকে বলে
“হিজড়া” শব্দটি একটি উর্দু শব্দ, যা সেমেটিক আরবি ধাতুমূল হিজর থেকে “গোত্র হতে পরিত্যাক্ত” অর্থে এসেছে [1]। পরবর্তীতে তা বাঙলা এবং হিন্দি ভাষায় বিদেশী শব্দ হিসেবে প্রবেশ করেছে। শব্দটির ভারতীয় ব্যবহারকে প্রথাগতভাবে ইংরেজিতে “ইউনাক” (Eunuch, অর্থঃ খোজা) বা “হারমাফ্রোডাইট” (hermaphrodite, অর্থঃ উভলিঙ্গ) হিসেবে অনুবাদ করা হয়, যেখানে “পুং জননাঙ্গের অনুপস্থিতি” বোঝানো হয়। সাধারণত অধিকাংশ হিজড়াই স্বাভাবিক পুরুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণকারী, তবে এদের মধ্যে আন্তঃলিঙ্গ বৈচিত্র্য নিয়ে জন্মানো অল্পসংখ্যক সদস্যও রয়েছে।