আমাদের সমাজে প্রায় প্রতিনিয়তই জারজ বলে একটি গালি দেয়া হয়। গালিটি সামাজিকভাবে এবং ধর্মীয়ভাবে খুবই প্রচলিত। একজন মানব শিশুকে যখন এই নোংরা গালিটি দেয়া হয়, কেন দেয়া হয় আমি জানি না। সে যদি তার পিতার পরিচয় না জেনে থাকে, তাতে সে কীভাবে অপরাধী, তা আমার বোধগম্য হয় না। কোন সন্তান তো পিতার পরিচয় জানার পরে জন্ম হয় না। আর ধর্মীয়ভাবে সেই সন্তানদের জন্মও তো একইভাবেই হয়। সৃষ্টিকর্তা যদি থেকে থাকেন, তিনিই তো তাদের জন্ম হওয়ার জন্য দায়ী। তাহলে ধার্মিকগণ, যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, তারা কেন এই গালিটি দেন, আমি জানি না।
ভূমিকা
প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য মুমিন মুসলমান আমাদের ইমেইলে, ইনবক্সে, ফেইসবুক পাতাগুলোতে এসে আমাদের একটি বিশেষ গালি দিয়ে দোজাহানের অশেষ নেকী হাসিল করেন। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তাদের মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় গালিটি হচ্ছে, মতের ভিন্নতা থাকলেই কাউকে জারজ সন্তান বলে গালাগালি করা। এই বিশেষ গালিটিই কেন তাদের এত বেশি পছন্দ? তাদের এই গালাগালির উৎস কোথায়? তারা কী মনে করে, এই গালিটি দিলে নাস্তিকদের খুব পরাজিত করা যায়? যুক্তির বিরুদ্ধে যুক্তি, মতের বিরুদ্ধে মত, তথ্যের বিরুদ্ধে তথ্য না দিয়ে তারা সম্ভব হলে আমাদের চাপাতি আক্রমণ করে, সেটি সম্ভব না হলে বই বা ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করে, সেটিও না পারলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়, সেটি করেও কোন কাজ না হলে জারজ বলে গালাগালি করে। এই গালিটিই যেন যুক্তি তথ্য প্রমাণের বিরুদ্ধে তাদের সকল রাগ ক্ষোভ এবং জালা মেটাবার একমাত্র পদ্ধতি। কিন্তু জারজ গালিটি আসলেই কী গালি হওয়ার উপযুক্ত? সেই সাথে, জারজ শব্দটি ব্যহহারের পেছনে তাদের মনস্তত্ত্ব কী? এই বিষয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
জারজ কাকে বলে?
শুরুতেই বলে নিচ্ছি, আমি জারজ সন্তানদের ততটাই পবিত্র মনে করি যতটা আরেকজন সমাজের চোখে কথাকথিত ‘বৈধ’ শিশুকে মনে করি। জন্ম সব সময়ই বৈধ, মানুষের জন্ম কখনো অবৈধ হতে পারে না। শিশুটির বাবা মায়ের সামাজিক বা ধর্মীয় প্রথা মাফিক বিয়ে হয়েছিল কিনা, তার ওপর ভিত্তি করে শিশুটির বৈধতার মূল্যায়ন আমার কাছে ভয়ঙ্কর নোংরা বিষয় মনে হয়। তাই যারা জারজ বলে গালি দেয়, তাদের আমি বর্বর মনে করি। অসভ্য মনে করি। যেই কাজের পেছনে শিশুটির কোন ভূমিকা নেই, সেই কাজের জন্য শিশুটিকে দায়ী করা, তাকে অপমান করা, অসম্মান করা, অত্যন্ত বর্বর কাজ।
‘জারজ’ শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে, যার পিতৃপরিচয় নেই বা যে সমাজের দৃষ্টিতে অবৈধ সন্তান । মানে কোন নারী পুরুষ বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক করার পরে যদি কোন সন্তান নারীর গর্ভে আসে তাকে আমাদের সমাজে জারজ বলে ডাকা হয়। সামাজিকভাবে এই ধরণের বাচ্চাদের নানাভাবে হেয় করা হয়, প্রতিনিয়ত অপমান এবং তুচ্ছ করা হয়। এটি একটি সামাজিক সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এই শব্দটিকেই ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করে দিতে হবে। কোন শিশুকে যেন তার জন্মের কারণে অপমানিত হতে না হয়, অন্য বাচ্চাদের সামনে ছোট হতে না হয়।
মনে রাখতে হবে, শিশুদের আত্মসম্মানবোধ খুব প্রবল থাকে। এই ধরণের তাচ্ছিল্য তাদের মানসিকভাবে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। উল্লেখ্য, মুসলিমদের মধ্যে যারা প্রতিনিয়ত অন্যদের জারজ বলে গালি দেন, তারা হয়তো ভুলেই যান যে, তাদের ঈসা নবী ছিলেন পিতৃপরিচয়হীন, প্রচলিত সামাজিক নিয়ম অনুসারে যাদেরকে জারজ সন্তানই বলা হয়। আজকে ধরুন কোন নারীর স্বামী বিদেশে থাকেন, সেই নারী যদি গর্ভবতী হয়ে দাবী করেন যে, আল্লাহর কুদরতে তিনি গর্ভবতী হয়ে গেছেন, ফেরেশতা বা জ্বীন এসে তাকে গর্ভবতী করে দিয়ে গেছে, এই কথা খুব বোকা লোকও বিশ্বাস করবে না। ঈসা নবীর মা মরিয়মের সময়ও নিশ্চয়ই লোকলজ্জার ভয় ছিল, তাই মরিয়ম বলতে পারে নি কীভাবে ঐ সন্তানটির জন্ম হয়েছিল। আল্লাহর ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়া সহজ, কারণ কে আবার বিষয়টি যাচাই করতে যাবে?
কোরআনে জারজ গালাগালি ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে বহু জায়গাতে অমুসলিমদের নানাভাবে গালাগালি করা হয়েছে। সেইসব গালাগালি নিয়ে অন্যত্র আলচনা করা যাবে, আজকে শুধু এই বিশেষ গালিটি নিয়েই আলোচনা করছি। কোরআনে কাফেরদের সম্পর্কে জারজ বলে একটি জায়গাতে গালি দেয়া হয়েছে। কোরআনের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অনুবাদে এই শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে [1]
ইসলাম ধর্মেও এই গালিটি কোরআন হাদিসে এসেছে এবং এই গালিটি দিতে অনুপ্রেরণা দেয়া হয়েছে। মুমিনগণ প্রায়শই নাস্তিকদের এই গালিটি দিয়ে থাকেন। অথচ, নবীর পিতার পরিচয় কী তা নিয়েই কিন্তু রয়েছে একটি মারাত্মক অভিযোগ। আসুন সেই অভিযোগটি রেফারেন্স সহ পড়ে দেখি।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন >>
Facebook collect : asif mohiuddin