Thursday, March 28, 2024
HomeHome২০ বছর পর মাকে খুঁজে পেল আমাজান জঙ্গলে উপজাতীদের মাঝে

২০ বছর পর মাকে খুঁজে পেল আমাজান জঙ্গলে উপজাতীদের মাঝে

ছোটবেলায় ডেভিড গুডকে তার মায়ের কথা জানতে চাইলে গুড এক কথায় জবাব দিতেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মা মারা গেছেন। আসলে তার মা সহি-সালামতেই বেচে ছিলেন। প্রায় নগ্ন অবস্থায় তার মা আমাজান জঙ্গলে বাস করেন। তিনি পিঠা বানান এবং গৃহস্থলীর কাজ করেন। সে মুখ ছিদ্র করে কাঠি পরে। এটা তার অলংকার। গোবরে পোকা ও রোস্টিং বোয়া (এক ধরণের সাপ) সে আমাজানের গভীর জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করে।

গুডের মা কখনোই শহুরে মা হতে চায় নি। তার নাম ইয়ারিমা। তিনি ভেনিজুয়েলার পাথুরে যুগের ইয়ানোমামি উপজাতী বংশোদ্ভব।

ইয়ারিমা ও কেনিথ গুডের ৩ সন্তানের এক সন্তান ডেভিড গুড। ডেভিড গুডের বাবা কেনিথ গুড একজন নৃ-বিজ্ঞানের অধ্যাপক। ৩০ বছর আগে কেনিথ নৃ-বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বহুবার ইয়ানোমামি উপজাতী জরীপে যান। একবার তার সাথে ইয়ারিমার দেখা হয়। কেনিথ সেখানে ১৫ মাসের বেশি সময় কাটান। তিনি ঐ সংস্কৃতির প্রেমে পড়ে যান। পরবর্তী ১২ বছর কেনিথ সেখানেই কাটান। ইতোমধ্যে উপজাতীর মুরব্বিগণ কেনিথকে একটি স্ত্রী উপহার দিতে চান। তখন ইয়ারিমা কৈশরে পা দিয়েছেন। ইয়ারিমা কেনিথকে মন বিনিময় করেন। পরে তাদের বিয়ে হয়। পরে কেনিথ ইয়ারিমাকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। কিন্তু তা-কি কোনো সহজ ঘটনা ছিল? না! তা সহজ ছিল না। যুবতী ইয়রিমাকে সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছিল। এখানে এসে তাকে শিখতে হয়েছিল- ওয়ান (এক), টু (দুই) ইত্যাদি। কোনো প্রযুক্তির সাথে তার চেনা-জানা ছিল না। সে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দিন কাটাচ্ছিল। এক সময় সে এই সভ্য জীবনকে ভয় পেয়ে বসল। গাড়ি-চাকা এগুলো ইয়ামির কাছে ভয়ংকর দানব বলে মনে হত। ইংলিশ শেখার জন্য প্রানন্ত চেষ্টাও করেছেন তিনি।

অবশ্য ইয়ারিমা ট্রাফিক জ্যাম, সোনার চেইন, স্থানীয় মেলা ও অ্যাকশন চলচ্চিত্র পছন্দ করে বসেছিল। কিন্তু কেনিথের মাইনে কমে যাওয়ায় ইয়ারিমার আর সিনেমায় যাওয়া হলো না। ইয়ারিমা নিউ জার্সির স্বামীর সংসারে একা হয়ে গেলেন। ১৯৯১ সালে কেনিথ একটি ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। তাই তিনি ডেভিড ও তার দুই ভাই-বোন ভ্যনেসা ও ডেনিয়েলেসহ পুরো পরিবার নিয়ে ভেনিজুয়েলা চলে আসেন। সেখানে গিয়ে উয়ারিমা এক উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিল। সে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবে না। ডেভিড তখন মাত্র ৬ বছরের শিশু।

“মাঝে মাঝে আমি ইয়ারিমাকে নিয়ে আসতাম। তখন তার স্তব্ধ মুখখানি মৃত্যুপুরী মনে হত। আমি ভাবলাম- তাই হোক”-কেনিথ জানালেন।

ডেভিড ১০ বছর বয়সে জাদুঘর পরিদর্শনে গিয়ে সে তার মায়ের হারানো মুখখানির ছবি দেখতে পায়। এ ছবিটা তার বাবাই তুলেছিল উপজাতী জরীপের জন্য।

‘আমি হীম-শীতল হয়ে গিয়েছিলাম”। ডেভিড তার আবেগ এভাবে ব্যাক্ত করতে গিয়ে নিউ ইয়র্ক পোস্টকে আরও বলেন, “আমার মনে হচ্ছিল শরীরের সব রক্ত ভেসে যাচ্ছে। আমি অন্ধকার এক কোনায় ১০ মিনিট লুকিয়ে থাকলাম।” এক সময় ডেভিড মায়ের শুন্যতায় ড্রাগ আসক্ত হয়ে পড়ে। নিজের ভেতরে সে ব্যথা নিয়ে দিন কাটাতে থাকে। ডেভিড তার বাবার লেখা একটি বই গড়তে গিয়ে তার মাকে খুজে পান। তখন তার বয়স ২০ বছর। তার মায়ের ইয়ানোমামি উপজাতী নিয়ে লেখা “ইনটু দ্যা হার্ট” বইতে তার বাবা তার মায়ের স্মৃতিচারণ করেছেন। ২০১১ সালে ডেভিড মায়ের উদ্দশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন। ১৯ বছর পার হয়েছে ইয়ারিমা তার ছেলেকে দেখে নি। ইস্ট স্ট্রাউটসবার্গের গ্রাডুয়েট ছাত্র ডেভিড বুঝতে পারছে না- সে তার মায়ের কাছ থেকে কি আশা করবেন। মায়ের উদ্দেশ্যে গুডের এ অভিযান এক বছর পার হয়ে গেছে। এখনো সে তার মাকে পায়নি। ১৯ বছর আগে শেষবার সে তার মাকে দেখেছে। এই উপজাতীর মধ্যেই তার মা হারানো গেছে।এই ট্রিপটা ছিল ২ বছরের।

ডেভিড পথপ্রদর্শক, দোভাষীদের সহযোগিতায় সে ওরিনোকো নদী পার হয়ে আমাজানের গহীন জঙ্গল পারি দিল। গুড জানে না তার মা বেচে আছে কিনা। এই ট্রিপের ধকলে গুডের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেছে। ট্রিপটা অনিশ্চিত হয়ে গেল। ডেভিড বলছিলেন নিউ ইয়র্ক পোস্টকে, “আমি জানতাম না- সে আমায় পছন্দ করবে কিনা, আমি তাকে পছন্দ করব কিনা, নাকি সে আমায় ছুড়ে ফেলে দিবে।”

যখন তার মা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসলেন, ডেভিড দেখা মাত্রই মায়ের মুখখানি চিনে ফেললেন। সে তার মাকে জরিয়েও ধরলেন না, চুমুও দিলেন না। কারণ এটা ইয়ানোমামির সংস্কৃতি নয়। কিন্তু সে তার মাকে এমন কিছু বললেন যা বলার জন্য বছরের পর বছর মায়ের জন্য অপেক্ষ করে আসছেন।

‘আমি বললাম,” মা, আমি তোমাকে পেয়েছি, আমি পৌছে গেছি। এটা দীর্ঘ অপেক্ষা, তবু আমি তোমাকে পেয়েছি।” তারা উভয়েই চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। ২৭ বছরের যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা গুডকে দেখে মনে হচ্ছিল সে কখনো আমেরিকান সংস্কৃতি দেখে নি। সে নিজেও ছোচালো হাড়ের আঘাত উপভোগ করল।

তাদর জীবনের সবকিছু- খাদ্য, আশ্রয়, ঝুড়ি এবং তীর তারা হাতে বানায়। তারা এগুলোর কাচামাল নিজ ভুমি থেকেই সংগ্রহ করে।

‘গহীন অরণ্যের মাঝে তাদের আধুনিক কোনো প্রযুক্তির ছোঁয়া নেই। নেই বিশ্বায়নের এ যুগের আধুনিক চাহিদা। তাদের শুধু আছে মানব হৃদয়ের অকৃত্রিম যোগাযোগ।’ গুড বলছিলেন।

গুড এই ইয়ানোমামি উপজাতীর মত সকল উপজাতী জীবনাচারকে সভ্য-শিক্ষিত মানুষের সাথে পরিচয় করে দিতে চায়। ‘আমি তাদের পার্থিব জীবনটাকে মল্যায়ণ করতে চাই। আপনারা তাদের সম্পর্কে নানারকম কথা শুনে থাকবেন। যেমন-তারা ‘আদিম-অসভ্য’। গুড বলছিলেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

২০ বছর পর মাকে খুঁজে পেল আমাজান জঙ্গলে উপজাতীদের মাঝে



Hero

Welcome to the future of building with WordPress. The elegant description could be the support for your call to action or just an attention-catching anchor. Whatever your plan is, our theme makes it simple to combine, rearrange and customize elements as you desire.

Translate »