Thursday, March 28, 2024
HomeRelationshipsআয়িশা কি নয়বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন?

আয়িশা কি নয়বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন?

ভূমিকা

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র হচ্ছেন নবীপত্নী হযরত আয়িশা। তার বিবাহ এবং সংসারের শুরু কত বছর বয়সে হয়েছিল সেই বিষয়ে আলোচনার সময়ে ইদানিং কালে এক ধরণের বিব্রত চেহারার মুসলিমদের দেখতে পাওয়া যায়, যারা নানান কৌশলে ইসলাম ধর্মে শিশু বিবাহের বিষয়টিকে ধামাচাপা, নয়তো তা সম্পর্কে মনগড়া কথা বলার চেষ্টা করেন। তারা প্রায়শই বলবার চেষ্টা করেন যে, ইসলামে শিশু বিবাহ থাকলেও যৌন কর্মের জন্য নারী শিশুটির প্রাপ্তবয়ষ্ক বা সাবালিকা হওয়া জরুরি। এই বিষয়টিকে তুলে ধরার জন্য তারা বলেন, হযরত আয়িশা ৯ বছর বয়সেই বয়ঃসন্ধিকালে পৌছে গিয়েছিলেন, কারণ সেই সময়ে নাকি অল্প বয়সেই মেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে যেতো। যা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। ইসলামে শিশু মেয়েদের বিবাহের নির্দিষ্ট কোন বয়সসীমা নেই, এবং মেয়েটির সাথে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক অবস্থায় এমনকি বয়ঃসন্ধিকালে না পৌঁছালেও যৌনকর্মে কোন বাধা নেই। সেই বিষয়টি নিয়েই এই লেখাটিতে আলোচনা করবো।

প্রাপ্তবয়ষ্ক কাকে বলে?

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো এবং প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া ভিন্ন বিষয়। বয়ঃসন্ধি হচ্ছে প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার একটি ধাপ, যা আসলে প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া বোঝায় না। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো মানেই ধরে নেয়া হয় সাবালিকা বা প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে যাওয়া। যদিও আধুনিক বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণা অনুসারে কথাটি সত্য নয়। বয়ঃসন্ধি হচ্ছে প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার লক্ষণের সুচনা। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হচ্ছেন একজন মানুষ যার তুলনামূলকভাবে পরিণত বয়স হয়েছে যা যৌন পরিপক্কতা ও পুনরূপাৎদনের ক্ষমতা অর্জনের সাথে জড়িত। একজন নারী বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছালেই সে সন্তান জন্ম দেয়ার পরিপক্কতা অর্জন করে না। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাবার পরে তার শরীর সন্তান জন্ম দানের উপযুক্ত হতে সবে শুরু করে। এই প্রক্রিয়া কারো কারো ক্ষেত্রে ৩ আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ৫ বছরে পূর্ণতা পায়। কিন্তু ইসলামে মেয়েদের সাথে যৌনকাজের জন্য বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোও জরুরি কিছু নয়। সেই বিষয়েই এই লেখাটি।

সারোগেসি সন্তানকে ‘রেডিমেড’ বলে বিতর্কে ইন্ধন, তসলিমাকে পাল্টা একহাত নেটপাড়ার

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭

বাঙলাদেশের আইনে বাল্যবিবাহ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের সংজ্ঞা এবং বাল্যবিবাহ দেয়ার শাস্তির বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। [1] [2] [3]

সংজ্ঞা
(১) “অপ্রাপ্ত বয়স্ক” অর্থ বিবাহের ক্ষেত্রে ২১ (একুশ) বৎসর পূর্ণ করেন নাই এমন কোনো পুরুষ এবং ১৮ (আঠারো) বৎসর পূর্ণ করেন নাই এমন কোনো নারী;
(২) “অভিভাবক” অর্থ Guardians and Wards Act, 1890 (Act No. VIII of 1890) এর অধীন নিয়োগপ্রাপ্ত বা ঘোষিত অভিভাবক এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ভরণ-পোষণ বহনকারী ব্যক্তিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(৩) “প্রাপ্ত বয়স্ক” অর্থ বিবাহের ক্ষেত্রে ২১ (একুশ) বৎসর পূর্ণ করিয়াছেন এমন কোনো পুরুষ এবং ১৮ (আঠারো) বৎসর পূর্ণ করিয়াছেন এমন কোনো নারী;
(৪) “বাল্যবিবাহ” অর্থ এইরূপ বিবাহ যাহার কোন এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক;

বাল্যবিবাহ করিবার শাস্তি
৭। (১) প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
(২) অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করিলে তিনি অনধিক ১ (এক) মাসের আটকাদেশ বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তিযোগ্য হইবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ৮ এর অধীন কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা দণ্ড প্রদান করা হইলে উক্তরূপ অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষকে শাস্তি প্রদান করা যাইবে না।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন বিচার ও শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে শিশু আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ২৪ নং আইন) এর বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।

বাল্যবিবাহ সংশ্লিষ্ট পিতা-মাতাসহ অন্যান্য ব্যক্তির শাস্তি
৮। পিতা-মাতা, অভিভাবক অথবা অন্য কোন ব্যক্তি, আইনগতভাবে বা আইনবহির্ভূতভাবে কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উপর কর্তৃত্ব সম্পন্ন হইয়া বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করিবার ক্ষেত্রে কোন কাজ করিলে অথবা করিবার অনুমতি বা নির্দেশ প্রদান করিলে অথবা স্বীয় অবহেলার কারণে বিবাহটি বন্ধ করিতে ব্যর্থ হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর ও অন্যূন ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

মধ্যযুগে মেয়েরা আগে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাতো?

অনেক ইসলামিক স্কলারই দাবী করেন যে, প্রাচীনকালে বা মধ্যযুগে মেয়েরা আগে আগে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে যেতো! প্রমাণ হিসেবে উনারা বলেন, উনাদের দাদী নানীরা অল্পবয়সে মা হতেন, রবীন্দ্রনাথ বা বঙ্কিমচন্দ্রের অল্পবয়সে বিয়ে হয়েছিল, সেইসব নারীদের অনেকেই মা হয়েছিলেন; এগুলোই নাকি প্রমাণ করে যে, আগের দিনে মেয়েদের বয়ঃসন্ধি আগে আগে হতো। মানে, তারা ৭/৮ বছর বয়সেই নিয়মিত যৌনকর্ম এবং সন্তান জন্মদানে পরিপক্ক হয়ে যেতো। এর মানে তারা বলতে চান, মেয়েরা আগে আগেই প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে যেতো। যদিও বয়ঃসন্ধি হওয়া মানেই প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া নয়। কারণ বয়ঃসন্ধি হচ্ছে কয়েকবছর ব্যাপী একটি শরীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া। এই বয়সটিতে ছেলেমেয়েরা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ থাকে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং প্রায়শই ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

এর মানে হচ্ছে, উনারা দাবী করেন, এখন যদি কোন অঞ্চলে মেয়েরা ১২ বছরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায়, আগের কালে ৭/৮ বছরেই পোঁছে যেতেন। অথচ, বর্তমান সময়ের বিভিন্ন রিসার্চ পেপারে দেখা যায় সম্পূর্ণ উল্টো কথা। আধুনিক গবেষণাতে এটি প্রমাণিত যে, আগের কালে মেয়েদের শরীরে খাদ্যাভাব এবং অপুষ্টিজনিত কারণে পিরিয়ড আরো দেরীতে হতো। বর্তমান সময়ে সুষমখাদ্য, পুষ্টিগুণ যাচাই, নানা ধরণের ভিটামিন এবং অন্যান্য ঔষধের কারণে মেয়েদের শরীরে পুষ্টির মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি খুব সহজেই এর প্রমাণ পাবেন, যদি গত ৫০ বছরের মাতৃমৃত্যুর হার যাচাই করে দেখেন। মাতৃমৃত্যুর হার বাঙলাদেশে এখন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, আগের চেয়ে এখন মেডিকেল ফ্যাসিলিটি, পুষ্টিকর খাবার, ভিটামিন এবং অন্যান্য বিষয় সহজলভ্য হয়েছে। এসব কারণে, বর্তমান সময়েই বরঞ্চ পিরিয়ড হচ্ছে দ্রুত। যেসব দেশের মেয়েরা পর্যাপ্ত পুষ্টি, খাদ্য, ঔষধ পাচ্ছে, সেসব দেশে মেয়েরা আরো আগে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাচ্ছে। নিচের গবেষণাগুলো এই বিষয়টি বেশ ভালভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। বেশ কিছু রিসার্চ পেপার যুক্ত করা হলো, আগ্রহী পাঠকগণ সময় পেলে পড়ে দেখবেন। [4] [5] [6] [7] [8] [9] [10] [11] [12]

আলোর মতো অন্ধকার তসলিমা নাসরিন

একইসাথে, বেশ কিছু ইসলামিক স্কলারগণের আরেকটি দাবী হচ্ছে, গরমের দেশে আম কাঁঠাল যেমন আগে আগে পেকে যায়, মেয়েরাও নাকি আগে আগে পেকে যেতো। এই কথাটিও মিথ্যা। গরমের সাথে বয়ঃসন্ধির কোন সম্পর্ক আছে, বা গরম তাপমাত্রা বয়ঃসন্ধি আগে হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব বিস্তার করে, সেটি কোন গবেষনাতেই পাওয়া যায় নি। বরঞ্চ, উষ্ণতার সাথে বয়ঃসন্ধির যে কোন সম্পর্ক নেই, এরকম অসংখ্য তথ্য তারা পেয়েছেন। পাঠকদের কাছে উপরের রিসার্চ পেপারগুলো যাচাই করে দেখার অনুরোধ রইলো।

বাল্যবিবাহ মেয়েদের জন্য মৃত্যুদণ্ড

ইউনিসেফ শিশু বিবাহকে মেয়েদের জন্য এক প্রকারের মৃত্যুদণ্ড বলে ঘোষনা দিয়েছে [13] । কেন এরকম ঘোষণা তারা দিলেন? এর কারণ বিশ্লেষণের জন্য কয়েকটা বিষয় ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকার।

আমাদের অনেকের মধ্যে অনেক বদ্ধমূল ভুল ধারণা রয়েছে যে, গরম দেশে মেয়েরা দ্রুত বয়ঃসন্ধিতে অবতীর্ণ হয়! অনেক মোল্লাকেও দেখবেন ওয়াজ মাহফিলে বলতে, গরম দেশে যেমন আম কাঠাল তাড়াতাড়ি পাঁকে, মেয়েরাও গরম দেশে অল্প বয়সে পেঁকে যায়।  কিন্তু, বিষয়টি পুরোই ভুল ধারণা। প্রথমত, মেয়েরা আম কাঁঠাল নয়। দ্বিতীয়ত, গ্রীষ্ম প্রধান দেশে মেয়েরা আগে আগে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায়, শীতপ্রধান দেশে ধীরে ধীরে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায়, এরকম কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। বয়ঃসন্ধিতে মেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ খানিকটা আগেই চলে আসতে পারে, যার পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ ফ্যাক্টর কাজ করে। সেগুলো দেশের উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে, এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

একজন মানব শিশুকে যখন জারজ নোংরা গালিটি দেয়া হয়, সন্তান কি পিতার পরিচয় জানার পরে জন্ম নেয়? Asif Mohiuddin

প্রথমেই আমাদের যা জানা প্রয়োজন, তা হচ্ছে মেয়েদের বয়ঃসন্ধি কিভাবে হয়। বয়ঃসন্ধি বা পিউবার্টি কী তা আমরা সকলেই কমবেশী জানি এবং বুঝি। আমরা অনেকে এটাও জানি যে, পিউবার্টির সময়ে নানাবিধ হরমোনাল পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে একজন মানুষ যায় এবং এই সব হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে তার শরীরে এবং মনে নানা ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠে। মনে রাখা দরকার, পিউবার্টি কোন আকস্মিক ঘটনা নয়, এটি একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে, যেই ধাপগুলো পূর্ণ করা প্রয়োজন।

একটি মেয়ে ৮-১০ বছর বয়সে তার মস্তিস্কের হিপোথেলামাস অংশটি গোনাড্রোপিন নামের একটি হরমোন নিঃসরন শুরু করে। এই হরমোনটির কারণে তাদের রক্তে লুটেইনাইজিং হরমোন এবং ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়। এই হরমোনগুলো তার ডিম্বাশয়ে পৌঁছালে ডিম্বাশয় এস্ট্রোজেন উৎপাদন করার জন্য সক্রিয় হয়।

এই সময়ে শুরু হয় তাদের শরীরকে গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত করে তোলার প্রক্রিয়া। এর সাথে সাথে আরো কিছু হরমোন নিঃসরণ হতে থাকে, যা মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটায়। অনেক সময় এই প্রক্রিয়াটি বয়সের চাইতে আগেও হয়ে যেতে পারে। তখন তাকে বলে প্রিকোশিয়াস পিউবার্টি। তবে তা হয়ে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি। কারণ এরকম হওয়ার প্রধানতম কারণগুলো হচ্ছে নানা ধরণের অসুখ বিসুখ, ইনফেকশন, রেডিয়েশন। সেই সাথে, আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া। অথবা, তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া।[14]

একটি শিশু মেয়ে যদি অতি অল্প বয়সেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, প্রায়শই দেয়া যায় তারা তাদের মামা চাচাদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, বা তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেই সময়ে তাদের মস্তিষ্কে কিছু ভুল মেসেজ যায়। মানুষের মস্তিষ্ক জানে না, এটি যৌন নির্যাতন নাকি স্বেচ্ছায় যৌনতা। মস্তিষ্ক তখন এই বিষয়ে একটিভ হয়ে ওঠে, এবং শরীরকে দ্রুত যৌনতার জন্য উপযুক্ত করে তোলার জন্য জরুরি হরমোনগুলো নিঃসরণ করতে শুরু করে দেয়। যা মেয়েটির ভবিষ্যত জীবন ধ্বংস করে ফেলতে পারে।

একটা মেয়ে যখন বড় হতে থাকে, বড় হওয়ার সাথে সাথে তার শরীরের হাড়গুলো গঠিত হতে থাকে। একটা শিশুর শরীরে ৩০০ এর বেশি হাড় থাকে, কিন্তু একজন মানুষ যখন পূর্ণ বয়ষ্ক হন তখন তার হাড় থাকে ২০৬ টা। এই হাড়গুলো প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া পর্যন্ত গঠিত হয়। মানে, একদিন হঠাৎ করে গঠিত হয়ে যায় না। বা পিরিয়ড হলেই হাড়গুলো সুগঠিত হয়ে যায় না। বয়ঃসন্ধির এই সময়টিতে ধীরে ধীরে গঠিত হতে থাকে। একটি মেয়ের ক্ষেত্রে, পেলভিক ফ্লোর এই সময়ে গঠিত হয়। যা বাচ্চা জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পর্নো আসক্তি আমার ব্রেনকে ধ্বংস করে দিয়েছে : বিলি আইলিশ

বিষয়টি এমন নয় যে, একদিন একটি মেয়ের পিরিয়ড হওয়া শুরু হলো, আর সাথে সাথে মেয়েটি সেক্স এবং বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে গেল। পুরো বিষয়টা ধীর গতির একটি প্রক্রিয়া, এবং এর এক একটি ধাপ রয়েছে। একটি ধাপ পরের ধাপের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু একটি মেয়েকে খুব ছোট বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হলে, বা নিয়মিত যৌন নির্যাতন করা হলে, বা বিয়ে দিয়ে স্বামীর যৌন চাহিদা মেটাতে হলে তার মস্তিষ্ক খুব দ্রুত তার শরীরকে যৌনতার জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করে। কিন্তু এই সময়ে যেই সমস্যাটি দেখা দেয়, তা হচ্ছে, মেয়েটির শারীরিক বৃদ্ধির জন্য যেই হরমোন নিঃসরণ প্রয়োজন, তা প্রায়শই শরীর বন্ধ করে দেয়। মানুষের মস্তিষ্ক এই সময়ে মনে করে, মেয়েটি যথেষ্ট বড় হয়েছে, সন্তান ধারণের উপযুক্ত হয়েছে, এখন আর শারীরিক বৃদ্ধির হরমোনের প্রয়োজন নেই।

ভারতের অনেকগুলো পতিতালয়ে দেখা গেছে, অল্প বয়সী মেয়েদের নানা ঔষধ খাইয়ে, ইঞ্জেকশন দিয়ে তাদের শরীরে দ্রুত পিউবার্টি আনার চেষ্টা করা হয়। সেই সমস্ত মেয়েদের স্তন এবং শরীরের অন্য অংশ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে, কিন্তু তাদের শরীরের হাড় বৃদ্ধি পাওয়া বন্ধ করে দেয়। এই কারণে এই ধরণের মেয়েরা প্রায়শই খর্বাকার হয়। আমাদের গ্রামাঞ্চলে এই কথাটি আপনি নানী দাদীদের মুখে প্রায়ই শুনে থাকবেন যে, যে সকল মেয়ের আগে আগেই পিউবার্টি চলে আসে, তারা আর বেশী লম্বা হয় না।

আরো বড় সমস্যা অপেক্ষা করে এদের জন্য, বয়স হওয়া শুরু হলে, বা সন্তান জন্মদানের সময়। পেলভিক ফ্লোর ঠিকমত গঠিত হওয়ার আগেই শরীর বৃদ্ধির হরমোন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এদের বাচ্চা জন্ম দেয়া একটি বিভীষিকাময় ঘটনা হয়ে ওঠে। অসংখ্য জটিলতা এবং ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে এই ধরণের মেয়েদের সন্তান জন্ম দেয়ার সময়। যা একজন পুরুষ কখনো কল্পনাও করতে পারবে না, এরকম ব্যথা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এমনকি, মেয়েটি প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে সন্তান জন্ম দিতে গেলেও ঠিক একই ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ তার শরীর বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই বয়ঃসন্ধি চলে এসেছে, বয়ঃসন্ধি মেয়েটি অতিক্রম করেছে অতি দ্রুত, এবং শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

এই ধরণের মেয়েদের খুব স্বাভাবিকভাবেই মেরুদণ্ডে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, হাঁটুর জয়েন্ট ক্ষয় হয়ে যাওয়ার মত সমস্যায় পরেন। এদের সন্তানরা হাবাগোবা বা নানারকম প্রতিবন্ধী হতে পারে। কারণ এদের শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে নি, তাই সন্তানকে পেটে থাকা অবস্থায় এই ধরণের মেয়েরা স্বাভাবিক পুষ্টির যোগানও দিতে পারেন না। এদের সন্তানগণের রোগব্যধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইমিউন সিস্টেমও অনেক দুর্বল হতে পারে। [15]

তাই, বাল্যবিবাহ এবং শিশু বয়সেই নিয়মিত যৌন সম্পর্ক একটি শিশু মেয়ের পরবর্তী জীবনকে শুধু ধ্বংসই করে না, একটি পুরো প্রজন্মকেও ধ্বংস করে। একটি ৫-৬ বছরের মেয়ের জীবন হবে সুন্দর, রঙিন। সে হাসবে, খেলবে, পড়ালেখা করবে। সে মাঠে ময়দানে দৌঁড়াবে, সাঁতার কাটবে, লাফাবে ঝাঁপাবে। ধীরে ধীরে তার শরীর গঠিত হতে থাকবে। সেই পুষ্টিকর খাবার খাবে, তার শরীরের হাড়গুলো ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকবে। ৯-১০ বছর বয়সেই তার শরীরে নানা ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। এবং এই পরিবর্তন ঘটবে ধীরে ধীরে। একটা সময়ে সে খুব দ্রুত লম্বা হতে থাকবে। এরপরে একটা সময় মস্তিষ্ক বুঝতে পারবে, শরীরের হাড়িগুলো ঠিকমত গঠিত হয়ে গেছে। এরপরে তার লম্বা হওয়ার হার কমতে থাকবে, এবং তার চেহারায় নারীসূলভ অভিব্যক্তি প্রকাশিত হতে থাকবে। এই পুরো প্রক্রিয়া চলতে থাকবে ১৮-১৯ বছর পর্যন্ত। যতদিন সে লম্বা হতেই থাকবে। সেই সময়ে তার শরীর নতুন হরমোনগুলোর সাথে ধীরে ধীরে এডোপ্ট করবে, এবং তার কিছুটা আগেই সে যৌনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, এই বয়সেই যেন সে সন্তান ধারণ না করে। গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত সময়ও এটি নয়। তা আরো পরে।[16]

 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন >> 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

আয়িশা কি নয়বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন?



Hero

Welcome to the future of building with WordPress. The elegant description could be the support for your call to action or just an attention-catching anchor. Whatever your plan is, our theme makes it simple to combine, rearrange and customize elements as you desire.

Translate »