আজ ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে একটা ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করলাম। আসলে বিয়েটা নিজের ইচ্ছেমতো করিনি। মায়ের জন্য করতে হয়েছে। আমি খুব গরিব ঘরের মেধাবি একজন ছেলে। মা হাসপাতালে ভর্তি মায়ের অপারেশন এর জন্য ১০ লাখ টাকার দরকার ছিলো।অফিসের বসের কাছে টাকা চাইতে গেলে উনি আমাকে এই শর্ত দেন। উনি আমাকে বলে উনি আমাকে টাকা দিতে পারে কিন্তু আমাকে বিনিময়ে তার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে।
আমি শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছি। অফিসের বসের মেয়েকে বিয়ে করবো এতে না বলার কী আছে। কিন্তু বস বললো উনার মেয়েটা নাকি ধর্ষিতা। ধর্ষিতা কথাটা শুনা মাত্রই আমি না বলে দিলাম। বললাম একটা ধর্ষিতা মেয়েকে আমি কেন বিয়ে করতে যাবো? বস আমার হাতে ধরে রিকোয়েস্ট করলো। বললো দয়া করে তুমি আমার মেয়েটাকে বিয়ে করো!
নয়তো ও যে কোন সময় আত্মহত্যা করে বসবে। ঠিক সেই সময় হাসপাতাল থেকে ফোন আসলো আর তারা জানালো তারা তারি ১০ লাখ টাকা জমা করে দিতে। অপারেশন করতে হবে নয়তো নাকি মাকে বাচাঁনো যাবে না। আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। আমি আর কিছু ভাবতে ও চাই না। আমি বসের সব শর্ত মেনে নিলাম। আর বসের মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলাম।
বস খুব বড় লোক। তাই বিয়েটা খুব ধুমধামেই দিলো। আজ আমার বাসর রাত। আমি বাইরে দাড়িয়ে ছিলাম। বসের মেয়ে মানে আমার বউ রুমে আগে থেকে বসে ছিলো। আমি প্রায় ১ ঘন্টা দেরি করে বাসর ঘরে ঢুকলাম। রুমে ঢুকেই দেখলাম মেয়েটা জানালার কাছে গিয়ে বাইরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো মেয়েটার মনটা খুবই খারাপ।
আমি মেয়েটার পিছনে গিয়ে একটু শব্দ করলাম। মেয়েটা পিছন ঘোরে আমার দিকে তাকালো। আর আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেন বিয়ে করলেন আমাকে? আপনি কী জানেন না আমি একজন ধর্ষিতা মেয়ে। আমি বললাম হুম জানি।মেয়েটি অবাক হলো। আর বললো সবাই তো আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আপনি এই বিয়েটা কেন করলেন?আমি কিছু বলছি না।
শুধু চুপ করে আছি। মেয়েটি দেখতে কিন্তু বেশ।আমি প্রথমে ভেবে ছিলাম মেয়েটা দেখতে বেশি ভাল হবে না। কিন্তু যখন ওকে দেখলাম তখন আমার ধারনটা ভেঙে গেলো। ওর নামটা জানতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে। বললাম আপনার নামটা কী জানতে পারি?মেয়েটা বললো ওর নাম নীলা। মনে মনে বললাম নামটা কিন্তু বেশ। বললাম নীলা যান আপনি শুয়ে পরুন।
কেন এই বিয়েটা করলাম তা অন্যদিন বলবো। নীলা বেডে আর আমি সোফায় শুয়ে পরলাম। খুব সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে পরলাম। আর ফ্রেস করে নিলাম। বাথরুম থেকে যেই ঘরে ঢুকেছি। টিক তখনি নীলার মায়াবী মুখটা নজরে এলো। নীলা তখন ঘুমিয়ে ছিলো। কী সুন্দর লাগছে নীলাকে চুল গুলো এলোমেলো ছিলো। আমি একধারে নীলার দিকে তাকিয়ে ছিলাম!
নীলার মুখটা কী মায়াবী লাগছিলো দেখে মনে হচ্ছিলো একটুকরো চাঁদ যেন হাসঁছে। আমি নীলার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে নীলা চোখ খুলে ফেললো। আর ও দেখে ফেললো যে আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমি একটু সরম পেলাম।
আর মনে মনে বলছি। আল্লাহই জানে নীলা কী ভাবলো আমায়? আমি রুমের বাইরে চলে আসলাম। নীলা বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো। আমার বস মানে নীলার বাবা আমাকে আর নীলাকে খাবার জন্য খাবার টেবিলে ডাকছে। আমরা দুজনে খাবার টেবিলে চলে গেলাম। নীলার বাবা আমাকে বললো। আজ থেকে তোমাকে আর চাকরি করতে হবে না।
আমি বললাম কিন্তু কেন? নীলার বাবা বললো তোমাকে এই ছোট চাকরি টা করতে হবে না! অফিস আমি সামলে নেবো। তুমি আমার মেয়েটাকে সময় দাও। ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাও!!আমি নীলার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম আমার মা কেমন আছে?উনি বললো
তোমার মায়ের অপারেশন হয়ে গেছে উনি এখন খুবই সুস্থ আছে। আমি কথাটা শুনে খুবই খুশি হলাম।
আমি নীলার বাবাকে বললাম আমি হাসপাতালে যাবো। আমার মাকে দেখতে। উনি বললেন হুম দেখে এসো গিয়ে। আমি খাবার শেষ করে রুমে চলে আসলাম। আর রেডি হচ্ছিলাম হাসপাতালে যাবো বলে। পিছন থেকে নীলা বলে উঠলো। একটা রিকোয়েস্ট করবো রাখবেন?পিছনে ফিরে দেখি নীলা। আমি বললাম হুম বলুন। অবশ্যয় রাখবো
নীলা বললো আমি আপনার সাথে হাসপাতালে আপনার মাকে দেখতে যাবো। আমি বললাম পারবেন তো যেতে। নীলা বললো সে যেতে পারবে। নীলার বাবা আমাকে একটা গাড়ি দিয়েছে।গাড়িটা বের করলাম। আর নীলাকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম। মাঝরাস্তায় খেয়াল করলাম নীলা গাড়িতে ঘুমিয়ে পরেছে।ওর মাথাটা আমার কাঁধে রেখেছে।
আমি ওকে ডাকলাম না। হাসপাতালে প্রায় পৌছে গেছি। আমি আস্তে করে নীলার কানের কাছে গিয়ে বললাম এই যে শুনছেন? হাসপাতালে এসে গেছি। নীলা চোখ খুলে ওর মাথাটা আমার কাঁধে দেখে একটু লজ্জা পেলো! আমি বললাম চলেন। আমরা মায়ের সাথে দেখা করলাম। নীলাকে দেখিয়ে বললাম মা আমি বিয়ে করেছি। নীলা গিয়ে মায়ের পা ধরে সালাম করলো।
মা খুব খুশি হয়েছে আমার বিয়ের কথা শুনে।মা বললো কী সোন্দর আমার বউ মা!নীলা মায়ের সাথে অনেক কথা বললো। মা আর নীলাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে। ওরা দুজন একে অপরের খুব পরিচিত। আমি মাকে বললাম মা কাল তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো। মা আমাকে বললো এখন অনেক রাত হয়ে গেছে তোরা বাড়ি ফিরে যা আমরা দুজন মায়ের থেকে বিদায় নিলাম।
আর বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। মাঝ রাস্তায় এসে গাড়ি থামালাম। নীলা জিজ্ঞেস করলো কী বেপার এখানে গাড়ি থামালেন যে?আমি বললাম গাড়ি থেকে নামুন। নীলা গাড়ি থেকে নামলো। আমি বললাম চলুন ফুসকা খাবো। নীলা প্রথমে না বললেও আমার জোরাজোরি তে খেতে রাজি হলো। আমরা দুজনে ফুচকা খাচ্ছি! আমি নীলাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার জীবনে এত বড় ক্ষতি কী ভাবে হলো? নীলা কিছু বলছে না। শুধু চোখের জল ফেলছে।
চলবে ??
কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন। ভাল লাগলে পরবর্তী পর্ব দেব। ।
©জুনায়েদ