লোকটাকে কেউ ডাকে মোল্লা সাহেব। কেউ ডাকে হোজ্জা। আবার কেউ কেউ বলে মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা। তবে এই লোকটি সম্পর্কে যিনি ব্যাপক রিসার্চ করেছেন, সেই প্রফেসর মিকাইল বায়ারাম জানান, এই মানুষটির পূর্ণ নাম নাসির উদ্দীন মাহমুদ আল খায়ী। জন্ম ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুরস্কে।
এদিকে ইরান, উজবেকিস্তান, আজারবাইজান আর আফগানিস্তানের মানুষও দাবি করে যে, হোজ্জা তাদেরই দেশের লোক। বিভিন্ন দেশ হোজ্জাকে তাদের লোক বলে দাবি করলেও শুধুমাত্র তুরস্কের আকসেইর শহরেই প্রতিবছর জুলাইয়ের ৫ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক নাসির উদ্দীন হোজ্জা উৎসব’ পালন করা হয়ে থাকে।
হোজ্জা মানুষটা ছোটখাটো, বেঁটে। মাথায় পরে পাগড়ি আর গায়ে চড়ায় জোব্বা। সার্বক্ষণিক সঙ্গী একটা গাধা। হোজ্জাকে নিয়ে হাজারেরও বেশি গল্প চালু আছে। কোনো গল্পে তাকে মনে হয় খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ। আবার কোনো গল্পে তার আচরণ একেবারেই বোকার মতো হয়। তবে তিনি পরিচিত তার সুক্ষ্ণ রসবোধের কারণে। তার নানা কথা আমাদের যেমন হাসায়, তেমনি ভাবায়ও বটে।
যাই হোক, হোজ্জা নিয়ে অনেক কথাই হল। এই বিখ্যাত মানুষটির বিভিন্ন মজার ঘটনা তোমাদের জানানোর জন্যই আজ বসা। চলো, আর কথা না বাড়িয়ে হোজ্জার গল্পগুলো শুনে আসি।
লবণ দিয়ে খাই
হোজ্জা আর তার এক বন্ধু একবার এক হোটেলে ঢুকল কিছু খাওয়ার জন্য। খাওয়া শেষে হিসাব করে দেখল যে, দুই গ্লাস দুধ খাওয়ার মতো টাকা ওদের হাতে নেই। তাই দুজনের জন্য এক গ্লাস দুধ চাইল। দুধ আসার পর হোজ্জার বন্ধুটি বলল, ‘ভাই, তুমি আগে অর্ধেকটা খেয়ে ফেল।
হোজ্জা জানতে চাইল, ‘কেন?’
বন্ধুটি বলল, ‘আমি আবার চিনি ছাড়া দুধ খেতে পারি না। অথচ, একজনের খাওয়ার মতোই চিনি আছে আমার কাছে। তাই বলছিলাম যে, তুমি অর্ধেকটা খেয়ে নিলে বাকিটা আমি চিনি দিয়ে খাব।’
হোজ্জা তখন গ্লাসটা হাতে নিয়ে তার মধ্যে অনেকটা লবণ ঢেলে বলল, ‘তাহলে আমার অর্ধেক ভাগটা আমি লবণ দিয়ে খেয়ে নিলাম। বাকিটা তুমি চিনি মিশিয়ে মিষ্টি করে খেয়ো!’
‘যেমন রোগ তেমন দাওয়াই’ নাসিরুদ্দীন হোজ্জার মজার গল্প | philosophybd
অর্ধেক ভাগ
একবার হোজ্জা বাদশাহর জন্য কিছু উপহার নিয়ে যাচ্ছিল। গেটে প্রহরী হোজ্জাকে আটকে দিল। বলল, তোমার উপহার আমাকে দাও, আমিই জাঁহাপনাকে দিয়ে আসব। কিন্তু হোজ্জা নিজেই উপহার দিয়ে আসতে চায়। এদিকে প্রহরীও নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত হোজ্জা বলল, ‘ঠিক আছে, আমি ভিতরে গিয়ে বাদশাহরকাছ তেকে যা বখশিশ পাব, তার অর্ধেক তোমাকে দিয়ে দিব।’ একথা শুনে প্রহরী হোজ্জাকে ভিতরে যেতে দিল।
হোজ্জা দরবারে গিয়ে বাদশাহকে উপহার দেওয়ার পর বাদশাহ খুব খুশি হলেন এবং হোজ্জাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তার কী চাই? হোজ্জা বলল ৫০ ঘা বেত্রাঘাত! দরবারের সবাই তো অবাক! এ কেমন উপহার চাওয়া? বাদশাহ যতই অন্য উপহার দিতে চান, হোজ্জা ততই বেতের বাড়ি নিতে চায়। মহা মুসিবত। শেষ পর্যন্ত হোজ্জার জেদের কাছে হেরে গিয়ে বাদশাহ নির্দেশ দিলেন হোজ্জাকে বেত মারার। ২৫ ঘা বেত মারার পর হোজ্জা থামতে বলল। তারপর বাদশাহর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘জাঁহাপনা, আমার পুরস্কারের একজন ভাগীদার আছে।’ বাদশাহ জানতে চাইলেন, ‘কে?’ তখন হোজ্জা দরবারে আসার পথে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। পুরো ঘটনা জানার পর বাদশাহ তখন ঐ প্রহরীকে ডেকে আচ্ছাসে বেত্রাঘাত করে তার পাওনা মিটিয়ে দিলেন!
অন্য গ্রামের মানুষ
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা একবার কী একটা কাজে পাশের গ্রামে গেল। কাজ শেষে ফেরার পথে এক লোক তকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ভাই সাহেব, আজ কী বার?’ হোজ্জা লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ভাই, আমি এই গ্রামের লোক না। অন্য গ্রামের মানুষ। কাজেই এই গ্রামে আজ কী বার, আমার জানা নেই।’ এ কথা বলেই হোজ্জা আবার হন হন করে হেঁটে চলে গেল!